ব্যুরো নিউজ ২৩ জুন : কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে শাসকদলের বিপুল ভোটে জয়লাভের আনন্দের মাঝেই ঘটল এক মর্মান্তিক ঘটনা। সোমবার ভোটগণনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় মিছিল চলাকালীন বোমাবাজিতে ১০ বছর বয়সী এক নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বড়চাঁদঘরের মোলান্ডি এলাকায়, যা রাজ্যের রাজনীতিতে আবারও বিরোধী কণ্ঠ দমনের অভিযোগ এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিজয় মিছিলের নামে বোমাবাজি ও মর্মান্তিক মৃত্যু
এলাকাবাসী এবং বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া বোমাতেই এই নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। মৃত নাবালিকার পরিবার সিপিএম সমর্থক বলে জানা গিয়েছে এবং অভিযোগ উঠেছে যে, তাদের বাড়ির লক্ষ্য করেই বোমা ছোড়া হয়েছিল। বোমার আঘাতে চতুর্থ শ্রেণির এই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঘটনার পর থেকেই মোলান্ডি এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, এবং স্থানীয়রা গভীর আতঙ্কে রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের প্রতিক্রিয়া: তদন্তের নির্দেশ
এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। নিজের ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, “কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অন্তর্গত বড়চাঁদঘর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে এক নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। আমি স্তম্ভিত, অত্যন্ত ব্যথিত। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। পুলিশ অবশ্যই এ বিষয়ে দ্রুত কড়া আইনি পদক্ষেপ নেবে। দোষীদের যত দ্রুত সম্ভব কড়া শাস্তি দিতে হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে-ই এই ঘটনায় জড়িত থাকুক না কেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না।
এদিকে, রাজ্য পুলিশও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, দোষীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। বোমা কারা ছুঁড়ল এবং কোথা থেকে এল, তা জানতে তদন্তে নেমেছে জেলা পুলিশ।
নির্বাচন কমিশনের উদ্বেগ ও রিপোর্ট তলব
উপনির্বাচনের পর এমন মর্মান্তিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
উপনির্বাচনের ফলাফল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আলিফা আহমেদ ৫০,০৪৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। আহমেদ ১,০২,৭৫৯ ভোট পেয়েছেন, যেখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আশিস ঘোষ পেয়েছেন ৫২,৭১০ ভোট। কংগ্রেসের কবিলউদ্দিন শেখ ২৮,৩৪৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। এই নির্বাচনী ফলাফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে ৬৮% ভোট পড়েছে। এর মধ্যে বিজেপি’র ৩০% ভোট প্রাপ্তি সম্প্রদায় ভিত্তিক ভোটব্যাংকের তীব্র মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস-সিপিএম জোট মাত্র ১৫.৪% ভোট পেয়ে কার্যত জামানত জব্দ হওয়ার পথে।
প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র ও বিরোধীদের অধিকার
সব মিলিয়ে বিজয়ের আনন্দের মুহূর্ত পরিণত হয়েছে শোকস্তব্ধ পরিবেশে। এই ঘটনা পুনরায় প্রমাণ করল যে, পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী রাজনীতি বা বিকল্প রাজনীতির গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। শাসক দলের বিজয় নির্বিচারে বিরোধীদের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে—দল, মত, বয়স নির্বিশেষে। এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলছেন, শুধুমাত্র রাজনীতির রেষারেষিতেই কি প্রাণ গেল এই নাবালিকার? আপাতত পুলিশি তদন্তে কী উঠে আসে, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে। এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক পরিবেশের উপর গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেল।