ব্যুরো নিউজ ১৯ জুন : শিয়ালদহ ডিভিশনের শহরতলির যাত্রীদের জন্য এবার এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। পূর্ব রেল শীঘ্রই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইএমইউ (AC EMU) লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (ICF) থেকে নির্মিত এমনই একটি অত্যাধুনিক এসি ইএমইউ ট্রেন ইতিমধ্যেই পূর্ব রেলের হাতে এসে পৌঁছেছে এবং ট্রায়াল রানের জন্য শিয়ালদহ ডিভিশনে পাঠানো হয়েছে। আরও একটি রেক শীঘ্রই আসবে বলে জানা গেছে। এই পরিষেবা চালু হলে দেশের দ্বিতীয় এবং পূর্ব ভারতে প্রথম এসি লোকাল ট্রেন কলকাতার বুকে ছুটবে, যা নিত্যযাত্রীদের জন্য বিশেষ স্বস্তি বয়ে আনবে।
প্রাথমিক রুট ও ভাড়ার কাঠামো
প্রাথমিকভাবে শিয়ালদহ ডিভিশনে আসা এই নতুন এসি ইএমইউ ট্রেনটি শিয়ালদহ-রানাঘাট রুটে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের সাধ্যের কথা মাথায় রেখেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের জন্য এসি ইএমইউ ট্রেনের ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ২৯ টাকা। ১১ কিলোমিটার থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ভাড়া লাগবে ৩৭ টাকা। মাসিক সিজন টিকিটের (MST) ক্ষেত্রে ১০ কিলোমিটারের জন্য খরচ পড়বে ৫৯০ টাকা এবং ১১ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ৭৮০ টাকা।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ট্রেনের আধুনিক বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা
এই ট্রেনগুলির সমস্ত কোচ সম্পূর্ণরূপে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে এবং স্টেইনলেস স্টিলের বডি দিয়ে তৈরি। রেকের সমস্ত ১২-কোচ সিল করা প্রশস্ত ভেস্টিবুল গ্যাংওয়ে দ্বারা সংযুক্ত থাকবে, যার ফলে যাত্রীরা মেট্রোর মতো সহজেই এক কোচ থেকে অন্য কোচে যেতে পারবেন। কোচগুলিতে দাঁড়ানোর জায়গার পাশাপাশি ভেস্টিবুলের জায়গাও রয়েছে।
প্রতিটি এসি ইএমইউ কোচের প্রতিটি পাশে ৪টি বৈদ্যুতিকভাবে চালিত ডাবল লিফ অটোমেটিক স্লাইডিং দরজা থাকবে। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এলে এই দরজাগুলি খুলবে এবং ছাড়ার আগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। কোচগুলিতে ডাবল সিল করা কাচের জানালা এবং ৩ আসনের স্টেইনলেস স্টিলের আসন রয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে প্রায় ১১০০ জন যাত্রী বসতে পারবেন।
যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য সমস্ত কোচে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকছে। এছাড়াও রাবার ফ্লোর টপ, অ্যালুমিনিয়াম এক্সট্রুডেড মডুলার লাগেজ তাক এবং জিপিএস-ভিত্তিক এলইডি ডিসপ্লে রয়েছে, যা যাত্রীদের তথ্য সরবরাহ করবে। এসি লোকাল হলেও ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের সুবিধার জন্য ফ্যানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। জিপিএস নিয়ন্ত্রিত আধুনিক প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেম এই ট্রেনগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
ট্রায়াল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইতিমধ্যেই এসি লোকালের ট্রায়াল শেষ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১২ কোচের দু’টি রেক দেওয়া হলেও, ভবিষ্যতে এসি লোকাল ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে। যদিও এই এসি লোকাল ট্রেন কোন কোন স্টেশনে থামবে, তা এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি। রেলের তরফে জানানো হয়েছে যে, সাধারণ ট্রেনের সময়সূচিতে বিঘ্ন না ঘটিয়ে এসি লোকালের জন্য নতুন সময়সূচি তৈরি হবে।
আঞ্চলিক যোগাযোগ ও গুরুত্ব
উল্লেখ্য, গত বছর রেল শিয়ালদহ-দমদম রুটে এসি লোকাল চালুর কথা ঘোষণা করেছিল। এবার রানাঘাট রুটে সেই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হতে চলেছে। পূর্ব রেল মনে করছে, নতুন এই এসি ট্রেন শুরু হলে দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য কলকাতার সঙ্গে সংযুক্ত নদিয়া এবং নদিয়ার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলির নিত্যযাত্রীরা অনেকটাই স্বস্তি পাবেন। এই এসি লোকাল চালু হলে রাজ্যের লোকাল ট্রেন যাত্রায় এক নতুন যুগের সূচনা হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা, কবে থেকে এই অত্যাধুনিক পরিষেবা পাকাপাকিভাবে শুরু হবে। এটি কলকাতার শহরতলির যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে এবং আধুনিক গণপরিবহনের ক্ষেত্রে এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।