ব্যুরো নিউজ ১৭ জুন : দেশের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং আদমশুমারি কমিশনারের কার্যালয় দ্বারা পরিচালিত এই বিশাল কর্মযজ্ঞে জনসংখ্যা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, আবাসন, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জনসেবার প্রবেশাধিকার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আগামী দশকে জাতীয় পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণের ভিত্তি হবে এই তথ্য, যা কল্যাণমূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ পর্যন্ত সবকিছুকে প্রভাবিত করবে।
ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন
এই প্রথমবারের মতো, ভারতের আদমশুমারি অত্যাধুনিক ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করবে। গণনাকারীরা ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করবেন এবং নির্বাচিত অঞ্চলে নাগরিকদের একটি ডেডিকেটেড সেন্সাস পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে স্ব-গণনার বিকল্প দেওয়া হবে। এই ডিজিটাল পদক্ষেপ প্রক্রিয়াটিকে সুগম করবে, ম্যানুয়াল ত্রুটি হ্রাস করবে এবং তথ্য সংকলনে গতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্তর্ভুক্তির উপর জোর
অন্তর্ভুক্তি একটি মূল অগ্রাধিকার। সরকার অভিবাসী শ্রমিক, শহরের গৃহহীন এবং উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে তথ্যে সম্পূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশেষ কৌশল ব্যবহার করবে। আদমশুমারি ঠিকানা-ভিত্তিক ডেটাবেসগুলিও আপডেট করবে, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কল্যাণ এবং আবাসনে জনসেবা বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
এনডিএ সরকারের প্রস্তাবিত জাতিগত জনগণনা: ২০২৭-এর মার্চ থেকে শুরু
জাতিগত জনগণনা: বিজেপি কেন্দ্রিক এনডিএ-র অবস্থান
কেন্দ্রীয় সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ২০২৭ সালের আদমশুমারিতে প্রথমবারের মতো জাতিভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এটি ১৯৩১ সালের পর প্রথমবার যখন সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার জাতিগত জনগণনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে এবং এটি ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। তাদের মতে, জাতিভিত্তিক তথ্য দেশের জনমিতিগত কাঠামো এবং সামাজিক বাস্তবতাকে আরও বিশদভাবে বুঝতে সাহায্য করবে, যা সরকারের বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক নীতিতে ‘টার্গেটেড স্কিম’ বা নির্দিষ্টভাবে সুবিধা পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে।
মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব উল্লেখ করেছেন যে, “প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার সমাজ ও দেশের মূল্যবোধ ও স্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধ। তাই আদমশুমারির সঙ্গে জাতি ভিত্তিক গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এর মাধ্যমে সমাজের কোন জাতির কী অবস্থা – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক দিক, কর্মসংস্থানে তারা কতটা পিছিয়ে – তা জানা যাবে বলে এনডিএ মনে করে।
বিরোধী দলের দাবি ও ভিন্নতা
জাতিগত জনগণনার দাবি দীর্ঘকাল ধরে বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, জোরালোভাবে উত্থাপন করে আসছেন। তারা যুক্তি দেন যে, জাতিভিত্তিক গণনা সমাজের প্রান্তিক এবং অনগ্রসর গোষ্ঠীগুলির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে, যা তাদের জন্য আরও কার্যকর নীতি প্রণয়নে সাহায্য করবে। রাহুল গান্ধী বারবার এই দাবি করেছেন এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকরাও একই দাবিতে সরব।
এনডিএ ও বিরোধীদের দাবির পার্থক্য
যদিও উভয় পক্ষই জাতিগত গণনার গুরুত্ব স্বীকার করছে, তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। বিরোধীরা প্রায়শই জাতিগত গণনার মাধ্যমে জনসংখ্যার আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের উপর ভিত্তি করে সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলি সামনে আনতে চায়, যা সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য অপরিহার্য বলে তারা মনে করে , যদিওবা প্রধান উদ্দেশ্য জাতিগত রাজনীতি প্রতিনিধিত্ত্বের ভিত্তিতে এবং সংরক্ষণের জেরে ।
অন্যদিকে, এনডিএ সরকার জাতিগত তথ্য সংগ্রহকে নীতিগত পরিকল্পনার ভিত্তি এবং ‘অন্ত্যোদয়’-এর মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক স্তরের মানুষের কাছে সুবিধা পৌঁছানোর একটি মাধ্যম দেখছে, যেখানে তথ্যের নির্ভুলতা এবং প্রয়োগের উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীরা সরকারের ‘নীতিগতভাবে’ জাতিভিত্তিক সমীক্ষা না করার পুরোনো অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যেখানে এনডিএ এখন এই পদক্ষেপকে তাদের নিজেদের উন্নয়নমূলক আদর্শের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে।
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক যৌথভাবে ডিজিটাল গণনার সময় তথ্যের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট এবং মিশন বাৎসল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আপডেট করা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতিগুলি শিশু সহ দুর্বল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় কর্মীদের নির্দেশনা দেবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য, ২০২৭ সালের আদমশুমারি বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ হবে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র হিসেবে ভারত যখন এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে, তখন এর ফলাফল জনস্বাস্থ্য, নগর পরিকল্পনা, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে – অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই – ভবিষ্যতের কৌশলগুলিকে আকার দেবে। দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্টা জনসাধারণের সহযোগিতার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, “আদমশুমারিতে অংশগ্রহণ একটি নাগরিক দায়িত্ব। প্রতিটি সঠিক তথ্য একটি আরও ন্যায্য, সমতাবাদী এবং উন্নত ভারত গঠনে অবদান রাখে।”
আসন্ন এই আদমশুমারি কেবল জনসংখ্যা গণনা করবে না, এটি একটি গতিশীল, বৈচিত্র্যময় এবং উদীয়মান ভারতের পরিবর্তনশীল মুখকেও প্রতিফলিত করবে।