Maheshtala Communal clash KP Tulasi mancha

ব্যুরো নিউজ ১২ জুন : বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় এক গোষ্ঠী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশের বাইকে আগুন, গাড়ির কাচ ভাঙচুর, পুলিশের উপর অবিরাম ইটবৃষ্টি—সব মিলে কয়েক ঘণ্টার জন্য দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল এলাকা। এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও রবীন্দ্রনগর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং চাপা আতঙ্ক রয়েছে গোটা এলাকাজুড়ে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত ও রণক্ষেত্রের চিত্র
 বুধবার দুপুরে মহেশতলায় একটি শিব মন্দিরের সামনে দোকান নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় দু’গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরোধিতা করে একটি ছোট তুলসী মঞ্চ তৈরি করলে, মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ তুলসী মঞ্চ তৈরির প্রতিবাদে ডেপুটেশন দিতে আসেন। এরপরই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অশান্তি শুরু হয় এবং তা দ্রুত সহিংস রূপ নেয়। দুষ্কৃতীরা পুলিশের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়, পুলিশের গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে পুলিশের উপর নাগাড়ে ইট ও পাথর ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়, কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। বরং, উন্মত্ত দুষ্কৃতীরা নতুন উদ্যমে পুলিশকে আক্রমণ করতে শুরু করে। প্রথমদিকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লাগে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হন, এমনকি একজন মহিলা পুলিশকর্মীও ইটের আঘাতে জখম হন। শিব মন্দির ও তুলসী মঞ্চে ভাঙচুর করা হয় ।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

পুলিশি পদক্ষেপ ও প্রশাসনের বক্তব্য
 ঘটনার পর রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে। ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলার সুপার রাহুল গোস্বামী বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং ধৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনি স্বীকার করেন যে প্রথমে পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি, কিন্তু পরে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি বলেন, “পুলিশ বাড়াবাড়ি করেনি, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই করা হয়েছে। আরও গ্রেফতার বাড়বে। পুলিশ সময়েই অ্যাকশন নিয়েছে। কোনও ধর্মান্ধতা বরদাস্ত করা হবে না। দল, ধর্ম, পরিচয় নির্বিশেষে কাউকে রেয়াত করা হবে না।” বর্তমানে রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকায় ১০টি পিকেট বসানো হয়েছে এবং অলিগলিতে পুলিশের রুট মার্চ চলছে। যদিও রাজাবাজার, শ্যাম্পুকুর, ধুলিয়ান, মোথাবাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা পুলিশের নিরপেক্ষ এবং পরিস্থতির নিয়ন্ত্রনে ভুমিকায় প্রস্ন তুলছে ।

বিরোধীদের কটাক্ষ ও প্রতিবাদের সুর
 মহেশতলার এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি শাসক দলের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনার পরই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক দিয়েছেন।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীভবনের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মহেশতলার ঘটনাকে “চরম নৈরাজ্য” বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী এসি ঘরে বসে আছেন এবং রাজ্যের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তার অভিযোগ, পুলিশের ৩০-৩৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন এবং ১২টি গাড়ি জ্বালানো হয়েছে। শুভেন্দু পরিস্থিতি সামাল দিতে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার তার সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারী মহেশতলায় হিংসা কবলিত এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে অনুমতি দেয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, যেহেতু এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, তাই কাউকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে, ১৬ জুনের পরে শুভেন্দু অধিকারী ওই এলাকায় যেতে পারেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল বিজেপি, কিন্তু অধ্যক্ষ অনুমতি দেননি। এরপর বিজেপি বিধায়করা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান এবং পরে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন। বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু অধিকারী মাথায় তুলসী গাছ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেন, যাকে তিনি ‘তুলসী মায়ের অপমান’ বলে অভিহিত করেন।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

শাসক দলের দায়সারা প্রতিক্রিয়া
 অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বুধবার সন্ধ্যায় মহেশতলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি এটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ উল্লেখ করে পুলিশের দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করেন। কুণাল বলেন, “কখনও কখনও এ ধরনের ঘটনা হয়, পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সংবেদনশীলতার সঙ্গে কড়া মনোভাব নিয়ে গোটা বিষয়টা দেখছে। পুলিশ আধিকারিক জখম হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন এখানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। এমন কিছু করেনি যাতে পরিস্থিতি আরও বেড়ে যায় বা জটিল হয়ে যায়।”
মহেশতলার এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর