ব্যুরো নিউজ ১১ জুন : জাতীয় পর্যায়ের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক গৌরব বল্লভকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের (EAC-PM) সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই নিয়োগটি তাঁর অর্থনীতিবিদ হিসেবে দক্ষতা এবং পূর্ববর্তী জল্পনাকে সত্য প্রমাণ করল। এই উচ্চ-পর্যায়ের উপদেষ্টা পরিষদে তাঁর অন্তর্ভুক্তি প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিষয়ে পরামর্শ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে এই পরিষদ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এস. মহেন্দ্র দেবের নেতৃত্বে কাজ করছে। এই নিয়োগের ফলে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে নতুন ভূমিকা
অধ্যাপক বল্লভ এখন ভারত সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক নীতি, উন্নয়ন এবং কৌশল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। তাঁর দীর্ঘদিনের একাডেমিক এবং গবেষণামূলক অভিজ্ঞতা এই পরিষদে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা যায়। দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং নতুন অর্থনৈতিক সুযোগগুলি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে তাঁর বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে, তাঁর পরামর্শগুলি নীতি নির্ধারকদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান প্রমাণিত হতে পারে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
অধ্যাপক বল্লভের শিক্ষাগত পটভূমি ও দক্ষতা
অধ্যাপক গৌরব বল্লভ তাঁর শিক্ষাজীবন এবং পেশাগত জীবনে অর্থনীতি ও অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের এবং বিদেশের বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে, যার মধ্যে বিভিন্ন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (IIMs) অন্তর্ভুক্ত, অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। IIM-এর মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা তাঁকে জটিল অর্থনৈতিক ধারণাগুলিকে বাস্তবসম্মত প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করার ক্ষমতা দিয়েছে। একজন সম্মানিত অর্থনীতিবিদ এবং অর্থ বিশেষজ্ঞ হিসেবে, তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক একাডেমিক জার্নালগুলিতে ১০০টিরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই গবেষণাপত্রগুলি বিভিন্ন অর্থনৈতিক মডেল, নীতি বিশ্লেষণ এবং উন্নয়ন কৌশল নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। সমসাময়িক অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে তাঁর লেখাগুলি নিয়মিতভাবে ভারতের প্রধান সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হয়, যা তাঁর সহজবোধ্য বিশ্লেষণের ক্ষমতাকে তুলে ধরে। এছাড়াও, তিনি অসংখ্য বৈশ্বিক সম্মেলনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর পরিচিতি ও প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তাঁর এই বিস্তৃত অভিজ্ঞতা এবং গবেষণা দক্ষতা প্রধানমন্ত্রীকে দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে এবং ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে আরও সুদৃঢ় করতে অবদান রাখবে।
রাজনৈতিক পটভূমি এবং বিজেপিতে যোগদান
অধ্যাপক বল্লভের এই নিয়োগের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। উল্লেখ্য, অধ্যাপক বল্লভ পূর্বে কংগ্রেস দলের একজন বিশিষ্ট মুখ ছিলেন এবং দলের মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন টেলিভিশন বিতর্কে তাঁকে দেখা যেত। তবে, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের consecration (প্রাণপ্রতিষ্ঠা) অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতৃত্বের বর্জনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন অর্থনীতি এবং নীতির ক্ষেত্রে তাঁর স্বাধীন চিন্তাভাবনার পরিচায়ক। বিজেপিতে যোগদানের পর, তাঁর মতো একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা দলের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ মতামতকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার একটি ইঙ্গিত বহন করে।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের গুরুত্ব এবং অধ্যাপক বল্লভের অবদান
EAC-PM একটি শীর্ষস্থানীয় সংস্থা যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং প্রধানমন্ত্রীকে সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক নীতি ও কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করে। এই পরিষদ অর্থনীতির বিভিন্ন দিক, যেমন – কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামাজিক উন্নয়ন – নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে থাকে। অধ্যাপক বল্লভের মতো একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদের অন্তর্ভুক্তি এই পরিষদকে আরও শক্তিশালী করবে এবং সরকারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
তাঁর গভীর অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ করে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে। ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য, যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়নের মতো চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান, সেখানে অধ্যাপক বল্লভের মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি। তাঁর নিয়োগের মাধ্যমে সরকার অর্থনৈতিক সংস্কার এবং প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন ধারণা ও কৌশল পেতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।