ব্যুরো নিউজ ৯ জুন : পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক তরুণী ছয় মাস ধরে এক ফ্ল্যাটে আটক , পর্নোগ্রাফি শ্যুট ও বার ডান্সারের কাজ করতে রাজি না হওয়ায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনা আবারও  পশ্চিমবঙ্গের অন্ধকার জগতের চিত্র তুলে ধরেছে। হাওড়ার ডোমজুড়ে একটি ফ্ল্যাটে এই অমানবিক অত্যাচার চলে, যেখানে তরুণীর হাত, পা ও দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়, লোহার রড দিয়ে মারা হয় এবং দিনের পর দিন খাবার দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ওই তরুণী সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত আরিয়ান খান এবং তার মা শ্বেতা খান ওরফে ‘ফুলটুসি’ বর্তমানে পলাতক।

কাজের টোপে ভয়ংকর ফাঁদ:

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন পানিহাটি এলাকার ওই তরুণী হাওড়া জেলার বাসিন্দা আরিয়ান খানের সঙ্গে পরিচিত হন। আরিয়ান তাকে বেশি আয়ের একটি চাকরির প্রস্তাব দেন। আগে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে কাজ করা ওই তরুণী প্রস্তাবটি বিশ্বাস করে হাওড়ায় যান এবং ডোমজুড়ে আরিয়ানের ফ্ল্যাটে আটকে পড়েন।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

অমানবিক নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফির প্রস্তাব:

তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, অভিযুক্ত আরিয়ান খান ও তার মা শ্বেতা খান ওই তরুণীকে পর্নো ভিডিও শ্যুট ও বার ডান্সারের কাজ করতে প্রস্তাব দেন। কিন্তু তরুণী রাজি না হওয়ায় অভিযুক্ত ও তার মা তার উপর লাগাতার শারীরিক নির্যাতন চালান। এমনকি তার গোপনাঙ্গে লোহার রড প্রবেশ করানোর চেষ্টাও করা হয়। নির্যাতিতা তরুণী হাসপাতালে জানিয়েছেন, তার বুকের কাছে কাটারি দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা, রড দিয়ে মেরে হাত ভেঙে দেওয়া, মাথায় লোহার রডের আঘাত এবং কোমরও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের এক সদস্যের অভিযোগ, মারধর এতটাই ছিল যে, তরুণী ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিলেন না। টানা পাঁচ মাস ধরে তিনি এই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান।

‘ইসারা এন্টারটেইনমেন্ট’-এর আড়ালে অন্ধকার ব্যবসা:

সূত্রের খবর, শ্বেতা খান ‘ইসারা এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে আরিয়ান খানের সঙ্গে একটি প্রোডাকশন হাউস শুরু করেন। তারা ২০২১ সালে ইউটিউবে একটি চ্যানেলও খোলেন। কিন্তু গত চার বছরে মাত্র ১১টি মিউজিক ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যা সন্দেহের উদ্রেক করে। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, এই চ্যানেল থেকে আপলোড করা বহু ভিডিওকেই ‘সফট পর্ন ভিডিও’ বলা যায়। অভিযোগ উঠেছে, এই প্রোডাকশন হাউসটি একটি পর্নোচক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। মা-ছেলে ‘সেক্স র‍্যাকেট’ এবং নীল ছবির শুটিংয়ের রমরমা কারবার ফেঁদে বসেছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের। অনেককে জোর করে দেহব্যবসায় নামানোর অভিযোগও উঠেছে।

অভিযুক্তদের দাপট ও অতীত:

অভিযুক্ত আরিয়ান খান ও তার মা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হয়েও , স্থানীয় এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন বলেও জানা গেছে। অভিযোগ, আরিয়ান খান যেসব লোক তাদের বিরোধিতা করতেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতেন, যদিও তিনি নিজে নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। তারা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, তার ভাড়াও নাকি দীর্ঘদিন ধরে দেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্বেতা খান ওই এলাকায় ‘ ফুলটুসি বেগম’ নামে পরিচিত এবং তিনি নিজে একসময় বার ডান্সার ছিলেন। শ্বেতার এক মেয়ের কাহিনিও উঠে এসেছে, নাম ইশিকা। মা ও দাদা তাঁকেও দুষ্কর্ম করতে চাপ দেওয়ার সে আত্মঘাতী হয় বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

পুলিশি তৎপরতা ও পলাতক অভিযুক্তরা:

তরুণী শনিবার অভিযুক্তদের ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে এসে নিজের জীবন বাঁচান। এরপর তার পরিবার খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাওড়ায় অভিযুক্তদের বাড়িতে হানা দেওয়া হলেও তারা বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা বর্তমানে পলাতক। তরুণীর মা দাবি করেন, তার মেয়েকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছেন শ্বেতা খান এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। পানিহাটির তরুণীর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ডোমজুড়ের এই মা-ছেলে পলাতক। এই গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশ এখনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে তদন্ত জারি রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর