ব্যুরো নিউজ ৭ জুন : অনুব্রত মণ্ডলের ‘কীর্তি’ ফাঁস করলেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে কদর্য ভাষায় হুমকির অভিযোগের জেরে যখন অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে তোলপাড় চলছে, তখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ‘বাংলা হান্ট’কে অনুব্রতর বিরুদ্ধে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, অনুব্রতর আদেশ অমান্য করায় তাঁকে ২১ দিন ‘বন্দি’ করে রাখা হয়েছিল, এবং আরও অনেকবার তাঁকে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
রাজ্য পুলিশে বড় রদবদল: বিনীত গোয়েল পেলেন আরও গুরু দায়িত্ব, সরলেন দময়ন্তী।
“বহুবার গালিগালাজ, মেরে ফেলার হুমকি”
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, অনুব্রত মণ্ডলের এমন কদর্য ব্যবহার তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়, কারণ অনুব্রত এই ধরণেরই মানুষ। উপাচার্য থাকাকালীন তাঁকে ফোনে বহুবার গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার ধমকিও দেওয়া হয়েছে। বহুবার তাঁকে ‘পাগল’ও বলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মেলা প্রাঙ্গণে তাণ্ডব ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা
একটি ঘটনা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎবাবু জানান যে, বিশ্বভারতীর মেলা প্রাঙ্গণের একটি হেরিটেজ গেট জেসিবি মেশিন দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার আগে অনুব্রত তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন যে তিনি গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক নিয়ে আসবেন। যেদিন ঘটনাটি ঘটে, সেদিন বাস, টোটো, ট্রাক্টর, বাইকে চেপে কয়েক হাজার লোক এসেছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডব চলে, যার নেতৃত্বে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, যদিও ময়দানে ছিলেন বীরভূম জেলার এক প্রাক্তন বিধায়ক ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। মেলা প্রাঙ্গণে ভাঙচুর চালানোর পর সিমেন্ট, বালি, সাইকেল, ঘাস কাটার যন্ত্র ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন যে, এই ঘটনার সময় তিনি প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পুলিশ ফোন ধরেনি বা ঘটনাস্থলে আসেনি। ৩ ঘণ্টা পর পুলিশ ফোন ধরে জানায়, তাদের কিছু করার নেই, কারণ “যেখান থেকে আদেশ এসেছে, সেই আদেশ ভঙ্গ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।” বীরভূম জেলার পুলিশের সবচেয়ে বড় আধিকারিক এই কথা বলেছিলেন বলে বিদ্যুৎবাবু দাবি করেন।
নওশাদের আইএসএফকে ফের নিশানা শওকতের: ‘গোটা বাংলা থেকে উঠে যাবে’
২১ দিন ‘বন্দি’ থাকার ঘটনা
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগটি হলো ২১ দিন ‘বন্দি’ করে রাখার ঘটনা। বিদ্যুৎবাবু জানান, অনুব্রত মণ্ডলের আদেশ ছিল অফলাইনে ক্লাস হবে কিন্তু পরীক্ষা হবে অনলাইনে। কিন্তু তিনি উপাচার্য হিসেবে সিদ্ধান্ত নেন যে, অফলাইনে ক্লাস হলে পরীক্ষাও অফলাইনে হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুব্রতর মনঃপুত না হওয়ায় তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ২১ দিন ধরে ‘বন্দি’ করে রাখে। শেষ দিকে তাঁর ঘরে লাইট ও জলের সংযোগও কেটে দেওয়া হয়। চাল সেদ্ধ করে তিনি বেঁচে ছিলেন।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, এই সময় পুলিশ তাঁকে বাঁচায়নি। তাঁকে বাঁচিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। তাঁর রায়ের ফলে ২১ দিন পর পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। তিনি এই ঘটনাকে অনুব্রত মণ্ডলের আক্রোশের একটি বড় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় উপাচার্যের আবাসনে হামলা
একবার এক ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় অনুব্রতবাহিনীর আক্রোশের শিকার হতে হয়েছিল বলেও জানান প্রাক্তন উপাচার্য। তিনি বলেন, প্রায় ২০০ জন লাঠিসোটা নিয়ে তাঁর আবাসন ‘পূর্বিতা’ আক্রমণ করেছিল এবং মূল গেট ভেঙে দিয়েছিল। বারবার পুলিশকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তারা কোনো পাত্তা দেয়নি। বিদ্যুৎবাবু বলেন, সেদিন তিনি সত্যি ভয় পেয়েছিলেন। রাত প্রায় ১১:৩০ নাগাদ তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে ফোন করার পর তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানান। এরপর পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। বিদ্যুৎবাবু দাবি করেন, সেদিন জগদীপ ধনকড় হস্তক্ষেপ না করলে হয়তো আজ তিনি জীবিত থাকতেন না।
মুখ্যমন্ত্রীর মদত?
বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হয়, এই ঘটনাগুলির সময় অনুব্রত মণ্ডলের প্রভাব ছিল এবং তাঁর মাথায় শাসকদলের হাত ছিল, এখনও কি একই জিনিস রয়েছে বলে তিনি মনে করেন? জবাবে বিদ্যুৎবাবু বলেন, “আপনি কি মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদ না থাকলে অনুব্রত মণ্ডলের এত সাহস হতো?
অনুব্রত বীরভূমের ভোট করান। ওনার শাগরেদদের দেখলে আপনি শিউড়ে উঠবেন… তাদের মধ্যে সবসময় একটা বিধ্বংসী মনোভাব ছিল। এই মনোভাবের পিছনে মদত ছিল অনুব্রত মণ্ডলের আর অনুব্রত মণ্ডলের পিছনে মদত ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর।”
তিনি আরও দাবি করেন যে, তিহাড় যাওয়ার আগের অনুব্রত এবং এই অনুব্রত একই। তিনি বলেন, “এই অনুব্রতকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বীরের সম্মান দিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এই অনুব্রতকে মুখ্যমন্ত্রীর একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী বলেছিলেন বীরভূমের বাঘ। এরা জানে, বীরভূমের ক্ষেত্রে কিছু করতে হলে, অনুব্রতই শেষ কথা।”
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে ভারত সরকারের কাছে আবেদন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি

















