দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ

ব্যুরো নিউজ ৬ জুন : দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ যেন কমছেই না। মন্দিরের নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে উদ্বোধন পর্যন্ত নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, আর এবার সেই বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে মন্দিরের ‘প্রসাদ’। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, এটি হিন্দুদের আস্থায় আঘাত এবং এক ধরনের মিথ্যাচার।

প্রসাদের নামে ‘স্থানীয় মিষ্টি’ বিতরণের অভিযোগ
শুভেন্দু অধিকারী এদিন সরাসরি অভিযোগ করেন যে, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের ‘প্রসাদ’ হিসেবে যা বিতরণ করা হচ্ছে, তা আসলে স্থানীয় মিষ্টি দোকানের তৈরি সাধারণ গজা ও পেঁড়া। তাঁর দাবি, এই মিষ্টি দিঘা থেকে আসছে না এবং এর সঙ্গে জগন্নাথ মহাপ্রভুর প্রসাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, এই মিষ্টিগুলোকে প্রসাদ নাম দিয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করা হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “প্রসাদের নামে স্থানীয় মিষ্টি দোকান থেকে গজা, পেঁড়া নিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। দিঘা থেকে আসছে না।”

‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসাদ’ আখ্যা
বিরোধী দলনেতা তাঁর অভিযোগের সুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি কটাক্ষ করেছেন। তিনি এই প্রসাদকে “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসাদ” বলে আখ্যা দিয়ে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে একটি বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পচে না গেলে নেবেন, তবে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করবেন না।” শুভেন্দু অধিকারী আরও দাবি করেন, “আমরা পর্দাফাঁস করলাম, হিন্দুদের আস্থায় আঘাত, চরম মিথ্যাচার।”

‘দুয়ারে রেশনের’ মাধ্যমে প্রসাদ বিতরণ?
সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী প্রসাদ বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন যে, রাজ্য সরকার ২০ টাকা মূল্যের এই প্রসাদের প্যাকেটগুলি ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, “জগন্নাথ মহাপ্রভুকে নিয়ে নানা রঙ্গ রাজ্যে। আবার তিনি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের আস্থায় আঘাত করার জন্য একটি প্যাকেট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। প্যাকেটটির দাম ২০ টাকা। ১টা গজা, ১টা পেঁড়া। এতে আপত্তি নেই। ২০ টাকা বরাদ্দতেও আপত্তি নেই…লোকাল মিষ্টি দোকানে হচ্ছে। দিঘা থেকে আসছে না। দুয়ারে রেশনের মাধ্যমে দিঘার প্রসাদ বিলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

হিন্দুদের আস্থায় আঘাতের অভিযোগ
শুভেন্দু অধিকারী এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে হিন্দুদের ধর্মীয় আস্থায় চরম আঘাত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এটায় নাম দেওয়া হয়েছে। কত বড় আস্থায় আঘাত। এটা মমতা ব্যানার্জির গজা, পেঁড়া হিসেবে নেবেন, প্রসাদ হিসেবে নেবেন না, যদি প্রকৃত হিন্দু হন…।” তিনি আরও ব্যঙ্গ করে বলেন, “আপনি জমজমের পানি জলের ফ্যাক্টরি থেকে পাঠাতে পারবেন?”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এই প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগে মন্দিরের বিগ্রহ নির্মাণের জন্য ওড়িশা থেকে নিমকাঠ চুরির অভিযোগ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, যা নিয়েও তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর হয়েছিল। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, “আমার এত খারাপ অবস্থাও হয়নি যে নিমকাঠ চুরি করতে হবে।” এবার প্রসাদ বিতর্ক নতুন করে মন্দির-রাজনীতিতে আরও ইন্ধন যোগ করেছে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর