ব্যুরো নিউজ ৫ জুন : আজ, ৫ই জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই বিশেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, পৃথিবী গ্রহকে রক্ষা এবং পরিবেশগত দায়িত্ব পালনে সকলের প্রচেষ্টা আরও গভীর করার জন্য। একই সাথে, তিনি ‘এক পেড় মা কে নাম পর ২.০’ (Ek Ped Maa Ke Naam Par 2.0) উদ্যোগের অংশ হিসেবে দিল্লির মহাবীর জয়ন্তী পার্কে একটি চারা রোপণ করেছেন।
‘এক পেড় মা কে নাম পর ২.০’: লক্ষ্য ১০ কোটি বৃক্ষরোপণ
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এক্স (আগের টুইটার) হ্যান্ডেলে এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “এই #WorldEnvironmentDay-তে, আসুন আমরা আমাদের গ্রহকে রক্ষা এবং যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হচ্ছি তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রচেষ্টা আরও গভীর করি। যারা পরিবেশকে আরও সবুজ ও উন্নত করতে সামাজিক স্তরে কাজ করছেন, তাদের আমি অভিনন্দন জানাই।”
দিল্লির মহাবীর জয়ন্তী পার্কে প্রধানমন্ত্রীর চারা রোপণটি ‘এক পেড় মা কে নাম পর’ উদ্যোগের বার্ষিকী উদযাপনেরও অংশ। এই উদ্যোগটি গত বছর ৫ই জুন বুদ্ধ জয়ন্তী পার্কে একটি অশ্বত্থ গাছ রোপণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নিজেই শুরু করেছিলেন। ‘এক পেড় মা কে নাম পর’ এর মূল ধারণা হলো – মায়ের নামে একটি গাছ লাগানো। এটি একটি প্রতীকী বার্তা , যা দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করে: একদিকে মায়ের জীবন-লালন-পালনকারী ভূমিকাকে সম্মান জানানো এবং অন্যদিকে গ্রহের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখা। গাছপালা মায়ের মতোই জীবন ধারণ, সুরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে। ‘এক পেড় মা কে নাম পর ২.০’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো এই বছর ৫ই জুন থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা ভারতে ১০ কোটি গাছ লাগানো।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ভারতের ক্রমবর্ধমান সবুজ আচ্ছাদন ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের ভূমিকা:
প্রধানমন্ত্রী মোদী সকলকে পৃথিবীকে আরও উন্নত করার জন্য অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, গত এক দশকে ভারতের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে দেশের বন আচ্ছাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্স-এ তিনি লিখেছেন, “আপনাদের সকলের খুব খুশি হবে যে, গত এক দশকে ভারত অসংখ্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, যা দেশ জুড়ে বন আচ্ছাদন বৃদ্ধিতে পরিচালিত করেছে। এটি আমাদের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের অনুসন্ধানের জন্য দারুণ। স্থানীয় সম্প্রদায়গুলি কীভাবে এই ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়।”
পরিবেশ সংরক্ষণে আদিবাসী কণ্ঠস্বর ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
মোদী সরকারের আমলে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির সঙ্গে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে সম্মান জানানোর বেশ কিছু দৃষ্টান্ত দেখা গেছে। এই সরকার দেশের প্রান্তিক পরিবেশবিদদের, বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদের, তাদের নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কর্ণাটকের হালাক্কি উপজাতিভুক্ত আদিবাসী পরিবেশবিদ তুলসী গৌড়া-কে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। তুলসী গৌড়া, যিনি ‘অরণ্যের বিশ্বকোষ’ (Encyclopedia of the Forest) নামে পরিচিত, ১২ বছর বয়স থেকে প্রায় তিরিশ হাজার গাছ লাগিয়েছেন এবং গাছপালা ও ঔষধি গাছ সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান পরিবেশ সংরক্ষণকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও, তিনি পরিবেশের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার জন্য সম্মানিত হয়েছেন। একইভাবে, উত্তরাখণ্ডের চিপকো আন্দোলনের জননী গৌরা দেবী, যিনি ছিলেন একজন আদিবাসী নারী, তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন গাছ বাঁচানোর জন্য। আদিবাসী পরিবেশবিদদের অবদান স্মরণীয়, এবং বর্তমান সরকার এই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এই ধরনের সম্মাননা দেশের সর্বস্তরে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিতে সহায়ক, যা টেকসই উন্নয়নের পথে ভারতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।