মাধব দেবনাথ,নদিয়াঃ বাবার বয়স ৪৫ বছর, মায়ের বয়স ৩৭। কিন্তু এহেন দম্পতির ছেলের বয়স কত জানেন? অবাক হবেন না। মাত্র ১৩৩ বছর। ভয়াবহ এই মুদ্রণ প্রমাদ ঘটেছে, খোদ সরকারি দফতরের সৌজন্যে। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে, নদীয়ার শান্তিপুরে। রেশন তুলতে নাজেহাল অবস্থা হয়েছে নিতান্ত নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীয়ার শান্তিপুরথানার বাবলা গ্রামপঞ্চায়েতের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা সাধন কর্মকার, পেশায় তাঁতশ্রমিক। কোনওরকমে সংসার চলে। কয়েকবছর আগে বিয়ে করেছেন সাধন। দুটি সন্তানও হয়েছে। বড়ছেলে সূর্য কর্মকারের বয়স এখন ১৪ বছর। পরিবার বড় হওয়ায় তাঁত বুনে সংসার চলছিল না। পেটের টানে তাই সপরিবারে মহারাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন সাধন। সেখানেই শ্রমিকের কাজ করছিলেন। কিন্তু সেই সুখের দিন, সাধনের কপালে সইল না। বরং সরকারি ভুলের খেসারত দিতে এখন মহারাষ্ট্রের কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বারবারই ছুটে আসতে হচ্ছে, নদীয়ার বাড়িতে। কারণ ছেলে সূর্য’র নামে তৈরি হওয়া সরকারি রেশন কার্ডে বয়স লেখা হয়েছে ১৩৩ বছর।
অবশ্য সরকারি গয়ংগচ্ছ কাজের এই দুর্ভোগ এই প্রথম নয়, এর আগেও পোহাতে হয়েছে, নিম্নবিত্ত এই কর্মকার পরিবারকে। প্রথমবার পাওয়া রেশন কার্ডে সূর্য কর্মকারের নাম বদলে হয়ে গিয়েছিল সুব্রত কর্মকার। সেবার সরকারি বিভিন্ন অফিসে গিয়ে নাম ঠিক করলেও, এরপর বয়সে জুড়ে গেল নতুন এক সরকারি ভুল। সাধনের স্ত্রী শ্রাবণী কর্মকারের দাবি বয়স সংশোধন করতে একাধিকবার বিডিও অফিসে গেলেও, এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। বিডিও অফিস থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, ছোট্ট এই সংখ্যার ভুল সংশোধন করতে, অন্ততপক্ষে দু’মাস লাগবে। যদিও বিস্ময়কর এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় রেশন ডিলার ব্রজলাল চৌধুরীর যুক্তি কিছু একটি ভুল যে ছিল, সেটা জানতাম। কিন্তু বয়সের যে এতটা তারতম্য ছিল, সেটা জানতাম না। যদিও এই ভুল সংশোধন করতে খুব বেশি সময় লাগে না। রেশনডিলারের আরও সাফাই, তিনি নিজেই সাধনবাবুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবেন।
যদিও ঘটনা জানাজানি হতেই, এলাকায় ছড়িয়েছে অন্য এক টিপ্পনি। জনৈক কবির কথা ধার করে এলাকাবাসী বলছে, ‘খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হল সরকারি রেশনের গুণে’।