ব্যুরো নিউজ ২৯ মে : অপারেশন সিঁদুরের পর প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গে আগমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। আলিপুরদুয়ারে তাঁর সভা ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে, কারণ ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের এক বছর আগেই এটি তাঁর প্রথম সফর। স্বাভাবিকভাবেই, এই “রাজনৈতিক পর্যটনে” এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি X হ্যান্ডেলে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর প্রশাসনিক অদক্ষতার অভিযোগ তুলেছেন। বাংলার মানুষের নাকি বর্তমান সরকারের ‘পকেটমার নীতি’ আর ‘অদক্ষ প্রশাসন’ নিয়ে চূড়ান্ত বিরক্তি! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি খাদের কিনারায়, সেখানে তৃণমূলের কুণাল ঘোষের মনোযোগ শুধুমাত্র কথার খেলায়। যেন দুর্নীতির পাহাড় জমে গেলেও, কথার ফুলঝুরি ছড়ালে সব ঠিক হয়ে যাবে!

পরিযায়ী পাখির কাব্য: বকেয়ার বোঝা আর লুটেরাদের মেলা

প্রধানমন্ত্রীর পোস্টকে ট্যাগ করে তৃণমূলের অফিসিয়াল X হ্যান্ডেল থেকে উড়ে এসেছে এক অদ্ভুত জবাব। তারা লিখেছে, “পরিযায়ী পাখিরা বাংলায় তাদের মরশুমি ভ্রমণ শুরু করেছে।” আর এর সঙ্গে হ্যাশট্যাগ জুড়েছে, “আয়ে হো তো বাতাকে যাও।” সাথে গেরুয়া উত্তরীয় পরা একটি পদ্মফুলের চিহ্ন আঁকা পরিযায়ী পাখির ছবি। বোঝাই যাচ্ছে, এখানে ‘পরিযায়ী পাখি’ আসলে বিজেপির নেতাদের কটাক্ষ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকার কেন রাজ্যের ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার ন্যায্য বকেয়া আটকে রেখেছে?

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

এইখানে মজার ব্যাপার হলো: যখন রাজ্যের অর্থনীতি লুটেরাদের পকেটে ঢুকে যাচ্ছে, তখন ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার বকেয়া নিয়ে চিৎকার করাটা বেশ হাস্যকর। যেন বাংলার মানুষ পকেটে কানাকড়ি না থাকলেও, কেন্দ্র থেকে আসা বকেয়া পেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! এই অর্থ যে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন নয়, বরং কিছু ‘বিশেষ’ ব্যক্তির ভাগ্যবদলের কাজে লাগতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। আর ‘আয়ে হো তো বাতাকে যাও’ – হয়তো এই বার্তাটা নিজেদের দলের দুর্নীতিবাজদের জন্যেও দেওয়া উচিত, যারা বাংলার সম্পদ নিয়ে ‘এসেছ তো নিয়ে যাও’ নীতিতে বিশ্বাসী!

কুণাল ঘোষের মুখে ‘উন্নয়ন’ আর ‘সন্ত্রাসবাদ’: ব্যঙ্গ ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ

শাসকদলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রীতিমতো তেড়েফুঁড়ে উঠেছেন। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী নাকি “অত্যন্ত বিচক্ষণের মতো” কেন্দ্রের প্রতি সৌজন্য দেখাচ্ছেন, অথচ কেন্দ্র তার সরকারের উপরই আক্রমণ করছে! মণিপুর দু’বছর ধরে জ্বলছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নাকি সেখানে যাওয়ার সময় হয়নি, অথচ তিনি পশ্চিমবঙ্গের ২৬-এর ভোটের আগে এসে হাজির! কুণাল ঘোষের এই অভিযোগগুলি শুনলে মনে হয় যেন বাংলার অর্থনীতি এক ‘উন্নয়নের স্বর্গ’, যেখানে কোনো দুর্নীতি নেই, কোনো প্রশাসনিক অদক্ষতা নেই। অথচ বাস্তবতা হলো, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বালি, কয়লা, গরুপাচার থেকে শুরু করে চাকরি দুর্নীতি – সব ক্ষেত্রেই টিএমসির নাম জড়িয়েছে। যখন রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীরা কাজের অভাবে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে, তখন কুণাল ঘোষের মুখে “এই সরকার যেভাবে উন্নয়নের কাজ করছে, তা গোটা দেশে বিরল” শুনে এক রাস করুণ হাসি চলে আসে। সম্ভবত তাঁর চোখে ‘উন্নয়ন’ মানে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির অস্বাভাবিক সম্পত্তির বৃদ্ধি!

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা দেশ যখন একসঙ্গে, তখন প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি’র জন্য দোষারোপ করাটা সেই পান্তা ভাতে ঘি ঢালার মতোই। কুণাল ঘোষের দাবি, প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর বা মণিপুরে যাননি, অথচ তৃণমূল গিয়েছে। এই কথার আড়ালে কী বোঝাতে চাইছেন? যে তৃণমূল ‘রাজনৈতিক পর্যটক’ নন, বরং ‘দুর্গাপূজা’র সময় ‘ চাঁদা ‘ আদায় করতে আসা ‘ধর্মপ্রাণ’ রাজনৈতিক কর্মী!

কলকাতায় তিরঙ্গা যাত্রা ,বিএসএফ জওয়ান মুক্তি, ভুয়ো খবর দমন, সন্ত্রাসবাদ নিপাতন : মোদীর নেতৃত্বে দেশ সুরক্ষিত দাবি শুভেন্দু অধিকারীর

‘রাজনৈতিক পর্যটক’ ও ‘সিঁদুরের রাজনীতি’: কুণালের শেষ তীর

কুণাল ঘোষ প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজনৈতিক পর্যটক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “ডুয়ার্সে অনেক পর্যটক আসে, কিন্তু আপনি এসেছেন রাজনৈতিক পর্যটক হয়ে।” এই কথাগুলি শুনে মনে হয় যেন তৃণমূলের নেতারা কোনো রাজনৈতিক পর্যটক নন, বরং ‘জনসেবার পুণ্যার্থী’ হিসেবে সারা বছর ধরে রাজ্যের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ান! আর তাঁদের এই জনসেবার ফলস্বরূপই পশ্চিমবঙ্গ নাকি অর্থনৈতিকভাবে এত স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে যে, কেন্দ্রীয় বকেয়া না পেলেও কোনো সমস্যা নেই!

সবশেষে, কুণাল ঘোষ বলেছেন যে সিঁদুরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না এবং বাংলার বকেয়া মেটাতে হবে। এই কথাটি শুনলে মনে হয় যেন সিঁদুর, যা এতদিন বাংলার নারীশক্তির এবং সংস্কৃতির প্রতীক ছিল, এখন তা রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। আর বকেয়া? সে তো যেন কিছু চাওয়া পয়সা, যা হাতে এলেই রাজ্যের অর্থনীতি রকেটের গতিতে ছুটতে শুরু করবে! আসলে, যখন রাজ্যের অর্থনীতি তলানিতে, বেকারত্ব বাড়ছে আর দুর্নীতির কালো মেঘে আকাশ ঢাকা, তখন কুণাল ঘোষের মতো ব্যক্তিরা শুধুমাত্র দোষারোপের খেলায় মেতে থাকেন। কারণ, এতেই তাদের রাজনৈতিক মুনাফা হয়, আর সাধারণ মানুষ মুখ বুজে সব মেনে নিতে বাধ্য হয়!

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর