ব্যুরো নিউজ ২৭ মে : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য সফরের পরপরই আগামী পয়লা জুন, রবিবার কলকাতায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই সফরকে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং বিজেপির নতুন রণকৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই দিনটি আবার বাঙালির ঐতিহ্যবাহী জামাইষষ্ঠী উৎসবের দিন। এই বিশেষ দিনে শাহের সভা আয়োজন, বিশেষ করে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে, এক আলাদা রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

শাহের আগমন: ‘জামাইষষ্ঠী’তে রাজনৈতিক বার্তা

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ১ জুন কলকাতা সফরের কথা রয়েছে। এর আগে গত মার্চ মাসে তাঁর বঙ্গ সফরের কথা থাকলেও, তা শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়েছিল। তাই এইবারের সফরটি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জামাইষষ্ঠীর মতো একটি পারিবারিক উৎসবের দিনে শাহের বাংলায় আসা এবং নেতাজি ইন্ডোরে জনসভা করাকে বিজেপির পক্ষ থেকে এক কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধার বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তেমনই রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের উপস্থিতি আরও দৃঢ় করার ইঙ্গিত মিলছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এর সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে থাকছেন না ইউসুফ পাঠান, তৃণমূল সাংসদের সিদ্ধান্ত

মোদী-শাহের জোড়া সফর: ২০২৬ টার্গেট

রাজ্যে আসন্ন রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে মোদী-শাহের পরপর দুটি সফর থেকে। আগামী ২৯ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন রাজ্যে, আলিপুরদুয়ারে সভা করবেন তিনি। এর ঠিক দু’দিন পরেই, ১ জুন, তাঁর ‘সেনাপতি’ অমিত শাহের আগমন। ১৯ জুন রাজ্যের কালীয়াগঞ্জে বিধানসভা উপনির্বাচন রয়েছে। এই উপনির্বাচনের আগে দুই শীর্ষ নেতার জোড়া সফর নিঃসন্দেহে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তিকে চাঙা করতে এবং কর্মীদের উজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে। তবে এই সফরের মূল লক্ষ্য যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন, তা রাজনৈতিক মহলে স্পষ্ট। এই জোড়া সফরকে বিজেপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের জন্য ‘রণকৌশল’ সাজানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বাংলার বুকে বিজেপির উত্থান-পতন: অতীত ও বর্তমান

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থান ঘটেছিল। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮টিতে পদ্মশিবির দখল করে নিজেদের শক্তি জানান দিয়েছিল। এরপরই ‘বাংলা দখল’-এর লক্ষ্য নিয়ে বিজেপি মাঠে নেমেছিল। কিন্তু ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়, ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন ভেঙে যায়। এরপর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বাংলায় বিজেপির আসন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১২। এই প্রেক্ষাপটে পদ্ম শিবিরের এখন প্রধান টার্গেট ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। তাই মোদী-শাহের এই ঘন ঘন সফরকে দলীয় সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার এবং নতুন রণকৌশল নির্ধারণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাজ্য সভাপতির ভবিষ্যৎ ও দলীয় পুনর্গঠন

অমিত শাহের এই সফর আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের পরবর্তী বিজেপি সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে এখনও জল্পনা চলছে। বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারই স্বপদে বহাল থাকবেন, নাকি এই পদে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিতর্ক রয়েছে। গুঞ্জন উঠেছে যে, শাহের এই সফরে রাজ্য সভাপতির পদ নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপির পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কলকাতায় তিরঙ্গা যাত্রা ,বিএসএফ জওয়ান মুক্তি, ভুয়ো খবর দমন, সন্ত্রাসবাদ নিপাতন : মোদীর নেতৃত্বে দেশ সুরক্ষিত দাবি শুভেন্দু অধিকারীর

উপসংহার: ভবিষ্যতের ইঙ্গিত

সব মিলিয়ে, অমিত শাহের এই জামাইষষ্ঠীর সফর নিছকই একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির রাজনৈতিক রণকৌশলের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই সফর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা পৌঁছে দেবে এবং রাজ্যস্তরে দলীয় পুনর্গঠনের পথ খুলে দিতে পারে। বাংলার রাজনীতিতে আগামী দিনে যে আরও উত্তাপ বাড়তে চলেছে, এই সফর তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর