ব্যুরো নিউজ ২২ মে : বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা এবং দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন তীব্র হয়েছে যে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি দেশের ক্ষমতা কাঠামোর একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীর বাংলাদেশে উপস্থিতি নিয়েও নতুন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা এই জল্পনাকে আরও উসকে দিচ্ছে।
সেনাপ্রধানের ‘আল্টিমেটাম’ ও ইউনূসের অবস্থান
বিভিন্ন সূত্রে খবর, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান একটি “চূড়ান্ত বার্তা” দিয়েছেন, যা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও এই “আল্টিমেটামের” নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু এখনো স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি নির্বাচন অনুষ্ঠান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সামগ্রিক শাসনের কার্যকারিতা নিয়ে সেনাবাহিনীর অসন্তোষের প্রতিফলন। এর পরপরই দেশের রাজনৈতিক মহলে “খেলা শুরু” হয়ে গেছে বলে আলোচনা চলছে, যা একটি তীব্র ক্ষমতার লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গঠিত হয়েছিল, তা দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, সেনাপ্রধানের কথিত “চূড়ান্ত বার্তা” ইউনূসের জন্য এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক গতিবিধি: জল্পনা ও বাস্তবতা
এদিকে, বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীর বাংলাদেশে উপস্থিতি নিয়ে নতুন প্রতিবেদনগুলি জল্পনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একাধিক সংবাদে জানা গেছে:
- মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক: আমেরিকান চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সহ তিন মার্কিন কূটনীতিক সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে একটি “মানবিক করিডর” এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
- মার্কিন বিমান বাহিনীর আগমন: বেশ কয়েকজন মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ঢাকায় এসেছেন। জানা গেছে, তাদের আগমন “ভারী সামগ্রী” নিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়, যা ভবিষ্যতে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করছে। এর আগে এপ্রিলের মাঝামাঝিতেও প্রায় ২০-২৫ জন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা ঢাকায় এসেছিলেন এবং তারা পরবর্তীতে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
- যৌথ সহযোগিতা ও সরঞ্জাম সংগ্রহ: মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা এর আগে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সামরিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা, এবং মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে, তবে তাদের সামরিক বাহিনীর এই ধরনের গতিবিধি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন মহলে গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভবিষ্যৎ পথ:
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং সামরিক বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত সংবেদনশীল। ড. ইউনূস সরকারের সামনে নির্বাচন আয়োজন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা একটি বিশাল কাজ। এমন পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের পদক্ষেপ এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথকে কীভাবে প্রভাবিত করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।