ব্যুরো নিউজ ২১ মে : ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটের পথেই হাঁটতে চলেছে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মালিক সংগঠনগুলি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল, বৃহস্পতিবার (২২ মে, ২০২৫) সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘট শুরু হবে। ফলে, শহর কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে সাধারণ যাত্রী পরিবহনে ব্যাপক ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিদ্ধান্তে অটল মালিক সংগঠনগুলি, দাবি ভাড়া বৃদ্ধির: বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বারবার সরকারের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিল। সরকারের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হলেও ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে কোনো ফলপ্রসূ সমাধান সূত্র মেলেনি। বাস মালিকদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে ডিজেলের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেলেও বাসের ভাড়া সেই অনুপাতে বাড়েনি। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে বলেন, “ডিজেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম বাড়ছে, কর্মীদের বেতন বাড়ছে, কিন্তু আমরা সেই একই ভাড়ায় বাস চালাচ্ছি। আমরা আর লোকসানের বোঝা টানতে পারছি না। বহু বাস মালিকের পক্ষে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছি, কিন্তু কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।”
যাত্রী ভোগান্তির ব্যাপক আশঙ্কা: ধর্মঘট শুরু হলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী কর্মস্থলে যাতায়াত, স্কুল-কলেজে যাওয়া এবং অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হবেন। বিশেষ করে, সকালে এবং সন্ধ্যায় অফিস টাইমে রাস্তায় যাতায়াতকারী মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া কঠিন হবে। মেট্রো রেল এবং লোকাল ট্রেন কিছু চাপ সামলাতে পারলেও, বাসের অনুপস্থিতি শহর ও শহরতলির যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
কলেজ ছাত্রী পূজা রায় বলেন, “আমার বাড়ি থেকে কলেজ অনেকটা দূরে। প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করি। ধর্মঘট হলে কী করে কলেজে যাব বুঝতে পারছি না। অটো বা ট্যাক্সিতে এত টাকা খরচ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
এক অফিসযাত্রী অমিত সাহা মন্তব্য করেন, “সরকার এবং বাস মালিকদের উচিত দ্রুত একটা সমাধান বের করা। সাধারণ মানুষ এর বলি হচ্ছে। কর্মস্থলে পৌঁছাতে আমাদের অনেক সমস্যা হবে।”
সরকারের অবস্থান ও বিকল্প ব্যবস্থার প্রশ্ন: যদিও সরকার পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস মালিক সংগঠনগুলি তাতে সন্তুষ্ট নয়। তাদের দাবি, শুধু আশ্বাস নয়, অবিলম্বে ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করতে হবে। পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী সম্প্রতি জানিয়েছেন, “আমরা বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করি একটি সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে। মানুষের যাতে সমস্যা না হয়, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।” তবে, ধর্মঘট রুখতে সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো বিকল্প জরুরি পরিষেবার কথা জানায়নি। কেবলমাত্র সরকারি বাস পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: এই ধর্মঘট নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলি সরকারের নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙুল তুলেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে উদাসীন। দ্রুত বাস ভাড়া বৃদ্ধি করে এই অচলাবস্থা কাটানো উচিত।” অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ভবিষ্যৎ: এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কতদিন চলবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদি সরকার এবং বাস মালিকদের মধ্যে দ্রুত কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে এই অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা রাজ্যের অর্থনীতি এবং জনজীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।