ইভিএম নিউজ ব্যুরোঃ একদিকে শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট প্রদান। অন্যদিকে সেই আসরে হাজির হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রেরিত রাজ্যপালের ভূয়সী প্রশংসা। জোড়া এই ঘটনায় রাজ্যের শাসকদল কার্যত আহ্লাদে আটখানা হয়ে প্রকাশ্যে দাদা বিবৃতি দিতে শুরু করেছেন। আর সেই বিবৃতিতেই ইন্ধন পড়েছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে। হয়েছে নতুন রাজনৈতিক তরজা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক অভিযোগকে হাতিয়ার করে, পাল্টা এই ডিলিট প্রদানের অনুষ্ঠানকেই নস্যাৎ করতে শুরু করেছেন বিজেপি সহ বিরোধীদলের নেতারা। তাদের পরোক্ষ সমালোচনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না স্বয়ং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস-ও।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারের আমলে গত কয়েকবছরে শিক্ষায় একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তা মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্ত চালাচ্ছে, কেন্দ্রীয় দুই সংস্থা সিবিআই এবং ইডি। তদন্তের ছাঁকনিতে ধরা পড়ে ইতিমধ্যেই জেলে গিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী আর বিধায়কসহ রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের একাধিক কর্তা। সিবিআই এর হাতে ধরা পড়েছেন শাসকদলের একাধিক নেতা আর যুবনেতা। প্রতিদিনই তদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। উদ্ধার হয়ে চলেছে কোটি কোটি টাকা। দিনকয়েক আগেই সিবিআইয়ের জালে ধরা পড়া হুগলির যুব তৃণমূলনেতা কুন্তল ঘোষের মুখে উঠে এসেছে কোনও এক ‘কালীঘাটের কাকু’-র প্রসঙ্গ । গোদের ওপর বিষফোঁড়ার নিয়োগ নিয়োগ দুর্নীতির চাকরি না পেয়ে খোলা রাস্তার উপর কয়েকশো দিন ধরে আন্দোলন করে চলেছেন, টেট পাস করেও বঞ্চিত শিক্ষকরা। পাশাপাশি গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের এই সময় পর্যন্ত নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের কোন না কোন এলাকা থেকে আসছে সংঘর্ষ আর প্রাণহানির খবর। উদ্ধার হচ্ছে বেআইনি অস্ত্র আর বোমা-বারুদ।
পরিস্থিতিতে বিজেপি আর বামেদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকদলের সর্বোচ্চ নেত্রীকে ডিলিট দেওয়ার আগে শিক্ষা দুর্নীতি সহ এই সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি কি, সেন্ট জেভিয়ার্স কর্তৃপক্ষ মাথায় রাখেনি?
ঘটনা হল, এর আগে ২০১৭ সালেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাজসেবামূলক কাজ এবং সাহিত্যকর্মের জন্য মমতাকে ডি-লিট প্রদান করেছিল। সেই ঘটনাতেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। প্রশ্ন উঠেছিল, বিশেষ সরকারি অনুদান পাওয়ার কৃতজ্ঞতাই, মুখ্যমন্ত্রীকে ডিলিট দেওয়ার মাধ্যমে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক যোগ্য শিক্ষাবিদকে টপকে সোনালীকে উপাচার্য পদে এক রকম সরকারি প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ঘটনাকেও, সেই ডিলিট দেওয়ার অন্যতম নেপথ্য কারণ হিসেবে তুলে ধরে, ব্যাপক সমালোচনা চালিয়েছিল বিজেপি আর বামেরা।
তাই এবার ঠিক কোন কৃতজ্ঞতার বশে, রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে চলতে এহেন ধারাবাহিক অসঙ্গতি চলার পরেও, সেন্ট জেভিয়ার্স কর্তৃপক্ষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডিলিট দিল, এখন সেটাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিরোধী নেতারা।


















