নিজস্ব সংবাদদাতা: কেন্দ্রের শাসকদল বাংলার প্রাদেশিক দলকে তেমন পাত্তা দেয় না। পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের আমলে, বারবারই এমন অভিমান আর অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিজেপি যে খানিকটা ব্যতিক্রমী, তার প্রমাণ পাওয়া গেল বৃহস্পতিবার বিকেলে। এদিন ২৬ শে জানুয়ারির পাশাপাশি সরস্বতীপুজো অনুষ্ঠিত হল, গোটা রাজ্যে। কলকাতায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সেই উপলক্ষে আয়োজিত ‘হাতে খড়ি’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের নবনিযুক্ত রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আমন্ত্রণ রক্ষা করে সেই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে, রাজ্য সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, নিজের ভূমিকাও যথাযথ পালন করেন রাজ্যপাল। অনুষ্ঠানে নিজের সংক্ষিপ্ত ভাষণের শেষে, রাজ্যপালকে তৃণমূল কংগ্রেসের সুরে “জয় বাংলা” বলতেও শোনা যায়। আর এই নিয়েই প্রকাশ্যে অভিমান জানিয়েছিলেন, শুভেন্দু অধিকারী আর দিলীপ ঘোষের মতো, বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয়স্তরের নেতারা। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, মুরলীধর সন্ধানে সেই অভিমান দূর করতে, বৃহস্পতিবারই আসল নামলেন দিল্লির তুঘলক রোডের নেতারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডাক পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলেই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন বাংলা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপালের এই দিল্লি সফরকে প্রকাশ্যে পূর্বপরিকল্পিত সরকারি সফল বলা হলেও, রাজ্য রাজনীতি পর্যবেক্ষকমহলের ধারণা, রাজ্যের শাসকদল তথা সরকারের একাধিক দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্য আসার পরেও, বর্তমান রাজ্যপালের তুলনামূলক নরম মনোভাব নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্তরে তৈরি হওয়া অভিমানকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছেন, দিল্লি তুঘলক রোডের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে সরকারি আমন্ত্রণ পেলেও, সাধারণ মানুষের করের টাকার অপব্যবহার করে, কেন ‘হাতেখড়ি’-র মত হাস্যকর অনুষ্ঠান করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবারের ওই অনুষ্ঠানে যাননি শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে, এদিনের ওই রাজ্যসরকারি অনুষ্ঠান নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, “ভুল শিক্ষকের কাছে হাতে করে হলে, (উনি) ভুলটাই শিখবেন”।
বলাবাহুল্য রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের এই অভিমানের খবর, মোদী, শাহ, নাড্ডাদের কাছে পৌঁছতে একেবারেই দেরি হয়নি। পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা,পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপির সর্বস্তরের মনোবল যাতে অটুট থাকে, সেই বার্তা দিতেই দিলীপ শুভেন্দুদের রাজ্যপাল সংক্রান্ত মনোভাবকে এভাবে গুরুত্ব দিতে চাইল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, পূর্ণ মেয়াদের রাজ্যপাল পদে শপথ নেওয়ার পরেই, রাজ্যের সরকারের সঙ্গে অযথা সংঘাতের রাস্তায় না যাওয়ার মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন, বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। জানিয়ে রীতিমত স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব। সূত্রের খবর, বর্তমান রাজ্যপালের সেদিনের সেই মন্তব্য এবং রাজ্যে একাধিক দুর্নীতির প্রসঙ্গে এখনও তাঁর নীরব হয়ে থাকাটাকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বঙ্গবিজেপিকে তেমন পাত্তা না দেওয়ার ইঙ্গিত বলেই মনে করতে শুরু করেছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর, যেভাবে রাতারাতি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তলব পেয়ে দিল্লিতে উড়ে গেলেন, তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের স্বস্তি যে খানিকটা হলেও কমে গেল, তেমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর