নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ আগেই সুর চড়িয়েছিলেন, ফুরফুরাশরিফের তিন তিনজন পীরজাদা। আর তাদের সেই কলকাতা অচল করে দেওয়ার অভিযানে সাড়া দিয়ে, বুধবার সকাল থেকেই ভিড় ক্রমে ক্রমে থিকথিকে শুরু করল, শিয়ালদহ স্টেশনে। পাশাপাশি ভাঙড়ের নানা এলাকা থেকে মিছিল জড়ো হয়ে এগতে শুরু করল ধর্মতলার রানী রাসমণি অ্যাভেনিউয়ের দিকে। গত রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের হাতিশালায়, আই এস এফ এর পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে, সকাল থেকেই সেখানকার তাজা নেতা আরাবুলের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল, রাজ্যের নতুন রাজনৈতিকদল, আইএসএফের কর্মী সমর্থকরা। সেদিনের সেই সংঘর্ষে, দলের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির গাড়ি ঘিরে হামলার ভাঙচুরের প্রতিবাদে, বিকেলের দিকে ধর্মতলা কার্যত অবরুদ্ধ করে দিয়েছিলেন, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কয়েকহাজার কর্মী। আর তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্বয়ং বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। কিন্তু এরপরেই ঘটে বিপত্তি। রাজপথকে যানজট মুক্ত করার অভিযানে নেমে, আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পাল্টা বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিসহ বেশ কয়েকজন আইএসএফ কর্মীকে টেনে হিচরে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপরই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, ভাঙড় আর কলকাতার রাজনীতি। সেদিন রাতেই ঘটনাস্থল ভাঙরের একাধিক এলাকায় বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে, আরো কয়েকজন আইএসএফ কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবারই এনিয়ে পাল্টা প্রতিবাদের সুর চড়িয়ে, বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর মুক্তির দাবিতে, ধর্মবর্ণ আর দলমত নির্বিশেষে লালবাজার অভিযানের ডাক দেন, ফুরফুরা শরীফের তিন পীরজাদা। সেই পাল্টা অভিযানের কর্মসূচি মেনেই, বুধবার শহর অচল করে মিছিলে নামল, আইএস এফ আর বামেরা। নানা দিক থেকে শহরের কেন্দ্রে আসা মিছিলগুলিতে অংশ নিলেন একাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব।
অবশ্য রবিবারের ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, এদিন শহরের নিরাপত্তা আর আইনশৃঙ্খলা সহ স্বাভাবিক জনজীবন বজায় রাখতে, চেষ্টার কোন কসুর করেনি পুলিশ প্রশাসন। শিয়ালদায় আগত মিছিল কারীদের বুঝিয়ে সুুঝিয়ে, প্রথমে মিছিলের পথ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু পাল্টা পুলিশকে বুঝিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ধর্মতলার দিকে এগোতে শুরু করে, নওসাদ সিদ্দিকের মুক্তির দাবিতে ডাকা এই মিছিল। রাজপথে সেই জনজোয়ার থেকে মুহুর্মুহু পুলিশকে লক্ষ্য করে স্লোগান উঠতে থাকে।
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল  রাজ্যের ২৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট, তাঁদের পক্ষে যায় বলে এতদিন প্রচার করলেও, এদিন কিন্তু মিছিলের নেতৃত্ব থাকা ফুরফুরাশরিফের পরিচালকরা বুঝিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সেই একতরফা দাবিতে, আক্ষরিক অর্থেই ফাটল ধরেছে। বিশেষত বালিগঞ্জে গত বিধানসভা উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া বামপ্রার্থী সায়রা হালিম এবং বহিষ্কৃত সিপিআইএমের তাত্ত্বিক নেতা প্রসেনজিৎ বসুর উপস্থিতি আর বক্তব্য, এদিন যেন তীক্ষ্ণ বাণ হয়ে ভেঙে গেল, শাসকশিবিরের দিকে। মিছিলকে জনবিরোধী আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধাচরণ বলে রাজ্যের শাসক দলের নেতারা দাবি করলেও, নওশাদ সিদ্দিকীর মুক্তির দাবিতে আইএসএফের এই মিছিলে, বিজেপি আর বাম সহ বিরোধীদের প্রবল সমর্থন যেন, সেই দাবিকে পাত্তাই দিল না। অন্যদিকে, সরাসরি এই মিছিলে পা মেলালেও, বিজেপি মানেই মুসলিম বিরোধী বলে, রাজ্যের শাসকদলের ভোটকেন্দ্রিক প্রচারকে ভোঁতা করে দিয়ে, এদিন মধ্য কলকাতার মুরলিধর সেন লেনের সংখ্যালঘু সেলের আয়োজনে পথে নামল, পৃথক আরও একটি সম্প্রীতির মিছিল।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর