ব্যুরো নিউজ,২০ সেপ্টেম্বর:মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের (EAC-PM) রিপোর্টে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার বৈষম্য স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরল এবং তামিলনাড়ু—ভারতের মোট জিডিপিতে প্রধান অবদানকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য, যা এক সময় অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ছিল, বিগত কয়েক দশকে ধারাবাহিকভাবে পতনের মুখোমুখি হয়েছে।
রাশি অনুযায়ী আজকে আপনার দিনটি কেমন কাটবে?
দক্ষিণের রাজ্যগুলির উত্থান
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে দক্ষিণের এই রাজ্যগুলির অবদান ভারতের জিডিপিতে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। ১৯৯১ সালে, এই রাজ্যগুলির মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের তুলনায় কম ছিল। তবে, অর্থনীতির উদারীকরণের ফলে এই রাজ্যগুলো দ্রুত আর্থিক উন্নতির দিকে এগোতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে কর্ণাটকের প্রযুক্তি খাত এবং তামিলনাড়ুর শিল্প কেন্দ্রগুলি ভারতের জিডিপি বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তেলেঙ্গানা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
কর্মবিরতি আংশিক তুলে নিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, নতুন আশার আলো
পশ্চিমবঙ্গের পতন
পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এক সময় (১৯৬০-৬১ সালে) এই রাজ্যটি ভারতের জিডিপিতে সর্বোচ্চ অবদানের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল, তবে বর্তমানে তার অবনতি ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবদান ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এই রাজ্যের বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয়, যা এক সময় জাতীয় গড়ের ১২৭.৫ শতাংশ ছিল, এখন ৮৩.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি রাজস্থান এবং ওড়িশার মতো রাজ্যের চেয়েও পিছিয়ে পড়েছে, যেগুলি প্রথাগতভাবে জিডিপির দিক থেকে পিছিয়ে ছিল।
কোটি টাকার হিরে ও সোনা , প্রাক্তন আমলার বাড়িতে ইডির তল্লাশি অভিযান
অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণ
পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে কলকাতার বন্দর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির কারণে এই রাজ্যটি একটি শীর্ষ অর্থনৈতিক অবস্থানে ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি, এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পতনের ফলে রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। গঙ্গার দুই পাড়ে গড়ে ওঠা বহু কল-কারখানা এবং ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে, যা কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিক্রান্ত মাশায়ের আবেগময় গল্প, ফিল্মফেয়ার ও সাধারণ জীবনের মহত্ব
ইতিহাসের আলোকে রাজ্যের অবদান
১৯৬০-৬১ সালে ভারতের জিডিপিতে অবদানের ভিত্তিতে শীর্ষ ৫টি রাজ্য ছিল:
- উত্তর প্রদেশ ১৪.৪ শতাংশ
- মহারাষ্ট্র ১২.৫ শতাংশ
- পশ্চিমবঙ্গ ১০.৫ শতাংশ
- তামিলনাড়ু ৮.৭ শতাংশ
- বিহার ৭.৮ শতাংশ
বর্তমানে, ২০২৩-২৪ সালে ভারতের জিডিপিতে শীর্ষ ৫টি রাজ্য হল:
- মহারাষ্ট্র ১৩.৩ শতাংশ
- তামিলনাড়ু ৮.৯ শতাংশ
- উত্তর প্রদেশ ৮.৪ শতাংশ
- কর্ণাটক ৮.২ শতাংশ
- গুজরাট ৮.১ শতাংশ
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
এখন সময় এসেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি পুনর্বিবেচনা করার। রাজ্য সরকারকে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে উন্নয়নশীল রাজ্যগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় ফিরতে পারে। আর্থিক সংস্কারের পাশাপাশি শিল্প ও ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি, নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলা, এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গ আবারও তার প্রাক্তন গৌরব ফিরে পেতে পারে।