লাবনী চৌধুরী, ১৬ ফেব্রুয়ারি: পুলিশ যেনও পথ সম্মুখে দণ্ডায়মান হিমালয়! সেই সুবিশাল পাহাড় টোপকে আগে যাওয়া যেনও বরই দুর্ভেদ্য। আর সেই দুর্ভেদ্য পাহাড় টপকাতে যত কাণ্ড!
বাংলায় আইনের শাসন নয়, চলছে শাসকের আইন
কোনও ভাবেই ঢোকা যাবে না এলাকায়। তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা প্রস্তুত। লোহার ব্যারিকেড, বিশাল বিশাল পুলিশ বাহিনী। উপর মহলের কর্তারা। কারা নেই সেখানে। কিন্তু এসবের পেছনে পুলিশের উদ্দেশ্য একটাই। কোনও ভাবে একালায় বিশৃঙ্খলা হতে দেওয়া যাবেনা। তার জন্য পথ আটকে যদি হয় লাঠালাঠি-মারামারি, তাও কোনও ব্যপার না। সে ক্ষেত্রে হোক না ১৪৪ ধারার একটু অপব্যবহার। তাতেই বেশি কিছু তো ক্ষতি নেই। কিন্তু, ওই যে বললাম এলাকায় ঢুকতে দেওয়া যাবে না কোনও মতেই। কি জানি কিসের এতো ভয়? রাজনৈতিক দলের নেতা-সাংসদরা কি এলাকায় চুরি করবে না ডাকাতি? তবে সে প্রশ্নের উত্তর জানে একমাত্র এরাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন।
সন্দেশখালিকাণ্ডের জল শীর্ষ আদালতে
সন্দেশখালিতে ধুন্ধুমার আজ যেনও নতুন ব্যপার নয়। রোজকার ডাল-ভাতের মতো। প্রতিদিন দফায় দফায় চলছে উত্তেজনা, বিক্ষোভ। তার কারণ সেই একটাই, এলাকায় পুলিশি প্রাচীর। সাধারণ মানুষের সমর্থনে, তাদের পাশে দাড়াতে, তাদের বিশ্বাস-ভরসা যোগাতে যদি কোনও মানুষ সেখানে যায়, তবেও খুলবে না সেই প্রাচীরের দ্বার। কিন্তু কি করার! তা বলে কি মানুষের পাশে দাঁড়াবে না মানুষ?
এলাকায় জারি ১৪৪ ধারা, তাই করা যাবে না জমায়েত। ইহাই যেনও মূল মন্ত্র। কিন্তু, আইন থাকলে থাকে আইনের ফাঁকও। তবে সেই ফাঁক দিয়েও পিঁপড়ে গলতে দেওয়া যাবেনা। ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও ৪ জন একসঙ্গে এলাকায় প্রবেশ করতে কোনও বাধা নেই। আর সেই যুক্তিতেও আমল দিতে নারাজ শাসক দলের ‘পোষা’ পুলিশ। আর এদিকে তাদেরও অকাট্য যুক্তি যে, এলাকায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রবেশ করলে তার সমর্থনে বহু মানুষ জমায়েত করবে। কোনও ভাবেই সেই জমায়েত আটকাতে পারবে না তারা। তবে একথা নেহাত মিথ্যা নয়। জন-দরদী নেতা যদি এই দুর্দিনে জনগনের মধ্যে এসে পৌঁছায় তবে তো জন-সমাগম হবেই।
কিন্তু সেন্ট্রাল টিম? তাদের এলাকায় ঢুকতে সমস্যা কোথায়? বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নির্দেশে ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সেন্ট্রাল হাইপাওয়ার কমিটি রওনা দেয় সন্দেশখালিতে। কিন্তু সেখানেও সেই একই সমস্যা। পুলিশের বক্তব্য, এলাকার বেশ কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এই দল গ্রামে ঢুকলে মানুষের জমায়েত হবে। আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই পুলিশি বাধার মুখে পড়ে রামপুরের নস্করপাড়ায় রাস্তায় বসে পড়ে সেন্ট্রাল হাই পাওয়ার কমিটি। রাস্তায় বসেই চলে ধরনা অবস্থান। সেন্ট্রাল টিমের বক্তব্য, যদি ১৪৪ ধারা জারিই থাকে, তাহলে চার জনকে যেতে দিন। কিন্তু পুলিশ সেই বক্তব্যও মানতে নারাজ।
বিশৃঙ্খলা আটকাতে গিয়ে এদিকে সেই দ্বন্দ্ব-বচসা-বিক্ষোভ হচ্ছে। মিছে ১৪৪-এর নামে আটকানো হচ্ছে মহিলা কমিশন থেকে শুরু করে নেতা-সাংসদ, সেন্ট্রাল টিমকে। কিন্তু অবাধে এলাকায় দাপিয়ে বেরাচ্ছে শাসক দলের প্রভাবশালীরা। গায়ের জোরে আটকানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় হাইপাওয়ার কমিটিকেও। বাংলায় আইনের শাসন নয়, চলছে শাসকের আইন। এমনটাই বলতে শোনা যাচ্ছে চারিদিকে। ইভিএম নিউজ