প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, ৮ ফেব্রুয়ারি: কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বহুল প্রচারিত ও চালু হওয়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পুরোটাই ওভার হেড বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। ওই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে প্রথমেই সমগ্র গাড়িটির এসি অচল হয়ে পড়বে এবং গাড়িটি দাড়িয়ে পড়বে সেখানে। অন্তত এপর্যন্ত বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এমন বিপদের মধ্যে একাধিকবার পড়েছে। হাওড়া- পুরী ও হাওড়া- নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে চলাচলকারী বন্দে ভারত দাড়িয়ে পরেছিল রাস্তায়। আর এমন অবস্থা ঘটলে যাত্রীরা আধ ঘণ্টার বেশি দাড়িয়ে থাকা গাড়িতে থাকতে পরবে না। নিঃসন্দেহে বন্দে ভারত একদিকে যেমন ঝাঁ চকচকে তেমনি ক্রেতা দুরস্ত। একটু সচ্ছল যাত্রীরা এখন নিঃসন্দেহে পুরী বা নিউ জলপাইগুড়িড় উদ্দেশ্যে হাওয়া যাত্রীরা প্রথমেই পছন্দ করছে বন্দে ভারত। স্বচ্ছ, বড়বড় কাঁচ, আরামদায়ক চেয়ার ও খাবারও যথেষ্ট ভালো, ফলে এমন গাড়ির ওপর যাত্রীদের টান থাকবে সেটা বলাই বাহুল্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এমন গাড়ির প্রশংসা করেছেন।
ভারতীয় সেনা অগ্নিবীর নিয়োগ 2024-এর আবেদন শুরু | জেনে নিন কীভাবে করবেন আবেদন
গরম জলের ব্যবস্থা রাজধানীতেও আছে
কিন্তু, অত্যাধুনিক এই গাড়ি অনেক ব্যবস্থাই কম্পিউটার ও লজিকগেট দিয়ে তৈরি। অনেকটা অটো পাইলটের মতো। যা বিমানে পাওয়া যায়। তবে, অনেক বিশেষজ্ঞি বলছেন ৪ টি কোচের ব্যটারি একটি কোচে আছে। সেটা যদি খারাপ হয় তবে ৪ টি কোচি খারাপ হবে। তবে সাধারণভাবে ৪ টি ব্যটারি একসঙ্গে অকেজো হয়ে পড়ে না। এখনও পর্যন্ত সে রকম ৪ টি ব্যটারি একসঙ্গে অকেজো হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু যদি ঘটে? তার বিকল্প ব্যবস্থা কি হবে? একইসঙ্গে অনেকে নাকি বলছেন রাজধানী এক্সপ্রেসকে টেক্কা দিচ্ছে বন্দে ভারত। রাজধানী এক্সপ্রেসে ওভার হেড বিদ্যুৎ বন্ধ হলে যাত্রীদের কোচের মধ্যে থাকার কোনও অসুবিধা হবে না। কারন, ওই গাড়িতে রয়েছে জেনারেটরের ব্যবস্থা। জেনারেটর চালিয়ে দিলে লাইট, ফ্যান, এসি সবি চলবে। যাত্রীরাও গাড়ির মধ্যে নিরাপদে আরামে থাকতে পারবেন। এছাড়া গরম জ্বলে স্নানের ব্যবস্থা শুধু বন্দে ভারতেই নেই। রাজধানী এক্সপ্রেসেও আছে। তবে তা শুধু মাত্র এসি ফাস্টক্লাসেই সীমিত। ওভার হেড ফেল করলে গাড়ি দাড়িয়ে পড়বে বন্দে ভারতে। এ ব্যপারে রাজধানী এক্সপ্রেসও বন্দে ভারতের মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। কিন্তু বন্দে ভারতে জেনারেটর না থাকায় ওভার হেড বিদ্যুৎ চলেগেলে আধ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীদের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি হয়ে উঠবে। বেড়িয়ে আসতে হবে কামড়ার বাইরে। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে গাড়ি যদি স্টেশনে না দাড়াতে পারে তবে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে। আবার ঘটনা যদি রাত-দুপুরে বন্দে ভারতের ক্ষেত্রে ঘটে তাহলে দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হবে নিরাপত্তাহীনতা। এমন ঘটনার সাক্ষীও থেকেছেন যাত্রীরা।
ঢক্কানিনাদ করে বন্দে ভারত চালু হয়েছে ঠিকই, সাধারণ মানুষ তাতে উঠে বসছেন কিন্তু বেশ কিছু অসুবিধা যা রয়েছে সেগুলো কি দূর করতে যুদ্ধকালীন তৎপরোতায় ব্যবস্থা নিচ্ছেন রেলকর্তারা? তাছাড়া পুশ ও পুল সিস্টেমে গাড়ির গতিও বাড়ানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরও একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। সেটি হল রেলওয়ে ট্র্যাকের অবস্থা। একে রেল পরিবহনের ক্ষেত্রে কমেছে যথেষ্ট কর্মী। শূন্যপদে নিয়োগ যথেষ্ট অপ্রতুল। আর রেলওয়ে ট্র্যাক রক্ষনাবেক্ষনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী সমস্ত জায়গায় আছে কি না সে প্রশ্নও মিলিয়ান ডলারে। রেলের ঠিকেদারদের কাজ দেখাশোনা করারও পর্যাপ্ত রেলকর্মীর অভাব আছে বলে রেলের বিভিন্ন কর্মচারী ইউনিয়ানগুলি গলা ফাটিয়ে আসছে। কিন্তু, কে কার ঝাড়ে বাঁশ কাটে? অতএব, এইঅবস্থায় যেমন চলা তেমনিই চলছে, তেমনই চলবে। ভারতে সবচেয়ে বৃহৎ এই সরকারী ক্ষেত্র সমাজসেবক মূলক প্রতিষ্ঠান বলেই মানুষ জেনে এসেছে। কিন্তু সে রাম আর সে অযোধ্যা দুই’ই আজ নেই। এ তো চলতি কথা। বাস্তবে অবশ্য রাম মন্দিরের সূত্রে অযোধ্যা এখন শুধু দেশের নয়, বিদেশের পর্যটনেও এখন দর্শনীয় স্থান। ধর্মীয় আবেগে রোজগার বেড়েছে আশাতীত। উত্তরপ্রদেশ সরকারও সেখান থেকে কর, রাজস্ব থেকে আয় বাড়াতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের আলোচ্য সেই অযোধ্যা নয়, শুধুই ঝাঁ চকচকে বন্দে ভারত ও তার ত্রুটি সংশোধনের বিষয়। মূল কথা হল, নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচা করে একটু আনন্দ পেতে ওই প্রিমিয়ার ট্রেনে চড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা যেনও বিঘ্নিত না হয়। ওভার হেড বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে যেনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনও নির্জন স্থানে বা অন্ধকারে বা কপাল ভালো হলে স্টেশনে অপেক্ষা করতে না হয়। ওই গাড়ি চালু হওয়ায় এক দিকে যেমন অসুস্থ মানুষেরা দ্রুত চিকিৎসার জন্য গন্তব্যে যেতে পারবেন, তেমনই স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করতে পারবেন। এই বিশ্বাস নিয়েই ওই গাড়িতে উঠছেন সাধারণ মানুষ। সেদিকেই খেয়াল রাখতে হবে রেল কর্তাদের। না হলে আবার গাইসাল অথবা করমণ্ডল এক্সপ্রেসে উড়িষ্যায় সদ্য ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় পুনরাবৃত্তি ঘটা অসম্ভব নয়। অবশ্যই এমনটা রেল কর্তারা চান না। নিরীহ সাধারণ মানুষতো নয়ই। ইভিএম নিউজ