রত্না দাসঃ মিড-লাইফ ক্রাইসিসে ভুগছেন? সমাধান জানুন… মিড-লাইফ ক্রাইসিস আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। জীবনে মধ্য বয়সে এসে প্রত্যেক মানুষের মানসিকভাবে ক্রাইসিস তৈরি হয়। কেন তৈরি হয় এই ক্রাইসিস? নারী পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বয়স যখন ৪০ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে তখন এই ক্রাইসিসের মধ্যে পড়েন। তার আগে মানুষের জীবনে একটি লক্ষ্য থাকে। যৌবন থাকে, শরীর, মন দুটোই সমস্ত প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। ইমোশন্স গুলো অন্যরকম থাকে ।
চল্লিশ এর কাছাকাছিতে সকলেই যৌবনকাল পেরিয়ে আসেন। দেহের সৌন্দর্য, মানসিক জোর, শারীরিক কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। অনেকেই তাদের প্রিয় জন যেমন বাবা-মাকে হারান, বন্ধুবান্ধবদের থেকে অনেকটা দূরে সরে যান ।পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। এই সময় মানুষকে হতাশা গ্রাস করে অনেক বেশি। যেমন কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় নড়বড়ে অবস্থা হয়ে যায়, কেউ কেউ আবার চাকরি জীবনে একঘেয়েমি অনুভব করেন, সন্তানদের মানুষ করতে করতেও একঘেয়েমি চলে আসে। সংসার জীবনের জটিলতায় তখন মনের বারবার প্রশ্ন ওঠে, কি করলাম? কি পেলাম ?হিসাব মেলানোর চেষ্টা করে মানুষ।
অতীতের সমস্ত ঘটনার জন্য অনেকে আক্ষেপ করতে থাকে। জীবনের অনেক অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা তৈরি হয় এই সময়। জীবনের আক্ষেপগুলো নড়েচড়ে ওঠে। ভালোবাসার জায়গাতেও তৈরি হয় বিভিন্ন প্রশ্ন : কাকে ভালো বাসলাম, কেন ভাল বাসলাম? যৌবনের সেই ভালবাসার সঙ্গে অনেকেই এই সময়ের ভালোবাসার মিল খুজে পান না। এই সময় মানুষ তার অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে শুরু করে। আর এর ফলেই তৈরি হয় হতাশা। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যা হলো রিসিভনেস এ্যাংজাইটি।
এই সময় মানুষের মনে দুটি দিক কাজ করে – একটি পজিটিভ দিক এবং একটি নেগেটিভ দিক। কেউ তার জীবনের ব্যর্থতাকে পেরিয়ে সাফল্য খোঁজার চেষ্টা করে। সে মনে করে জীবনে কি হারিয়েছি এবং আমাকে নতুন করে কি পেতে হবে। সেই পাওয়ার জন্যই সে মরিয়া হয়ে ওঠে। আবার যারা নেগেটিভ চিন্তা করেন তারা ভাবেন জীবন আমাকে কি দিয়েছে, জীবন থেকে তো আমি কিছুই পাইনি।
মেয়েদের এই সময় শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। তারা তখন পুরনো দিনের সঙ্গে তুলনা করতে থাকে এবং তখনই তাদের হতাশা গ্রাস করে। ছেলেদের মধ্যেও এই পরিবর্তন আসে। ছেলেরা বিশেষ করে এটা নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়েন যে তারা কি পেয়েছেন এবং কি পাননি। এই সময় ছেলেরাও চরম হতাশায় ভুগতে থাকেন। এই সময় তারা চরম অসুখী অনুভব করে নিজেদের। আর এই পাওয়া এবং না পাওয়ার মধ্যে অনেকেই নতুন কিছু করতে চায় । অনেকেই আবার জীবনসঙ্গিনী বা সঙ্গীর কাছ থেকে না পাওয়া বিষয়গুলিকে বড় করে দেখতে থাকেন। নিজেদের খালি ও ফাঁকা মনে করতে থাকেন ।
এই থেকে কেউ নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আবার কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। কারণ কর্ম জীবনের অনেক ব্যর্থতাই তখন তারা দেখতে থাকেন। ফলে নতুন করে তারা একটি কম্পিটিশনের মধ্যে ঢুকে পড়েন। ফলে এই দ্বৈত অবস্থায় জীবন একটি চরম অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যায়। এই অস্থিরতাকে চ্যালেঞ্জ করে কেউ এগিয়ে চলেন, আবার কেউ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। এসব করতে থাকেন। অতীতে কি হয়েছে, কি করতে পারেননি? কি প্ল্যান ছিল যা সাকসেস হয়নি, এই সবকিছুর মধ্যে নতুন করে জীবনের পরিকল্পনা শুরু করেন। ফলে নারী-পুরুষ সকলের মধ্যে একটি হতাশাময় টানাপোড়েন কাজ করে।
৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে এটা খুব কমন হয়ে যায়। কারণ এই সময় যেমন মস্তিষ্কে পরিবর্তন হচ্ছে শরীরে পরিবর্তন হচ্ছে তেমনই নিজের জীবন ও ক্যারিয়ারেও পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। অনেকে এই সময় থেকে আধ্যাত্মিক জগৎ বেছে নেয়, আবার অনেকেই পড়ে থাকা স্বপ্নের পূরণে ব্যস্ত হয়ে যান। আবার অনেকে চরম হতাশা থেকে খারাপ কাজে যুক্ত হয়ে যান। আবার অনেকে মনে করেন তার দিন ফুরিয়ে আসতে চলেছে। ফলে তাকে কিছু ভালো কাজ করতে হবে। এইসব কারণের জন্য এই বয়সে মস্তিষ্কে চরম চঞ্চলতা তৈরি হয়। তবে এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিলে উপকৃত হবেন। ইভিএম নিউজ