ব্যুরো নিউজ ০৬ নভেম্বর ২০২৫ : বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এবারই প্রথম নির্বাচন কমিশন (ECI) সমস্ত পোলিং স্টেশনকে সিসিটিভি নজরদারির আওতায় এনেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু এবং বিবেক জোশী নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি ভোটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সকাল ৭টায় শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে, যদিও নিরাপত্তার কারণে কিছু এলাকায় এক ঘণ্টা আগেই ভোট শেষ হবে। আজ মোট ১৮টি জেলার ১২১টি আসনে প্রায় ৩.৭৫ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে ১০.৭২ লক্ষ নতুন ভোটার এবং ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৭.৭৮ লক্ষ তরুণ ভোটার রয়েছেন।
প্রচারে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ: ‘জঙ্গল রাজ’ বনাম ‘ভয়ের শাসন’
প্রথম দফার ভোট চললেও, দুই প্রধান জোট—এনডিএ (NDA) এবং মহাগঠবন্ধন—এর তারকা প্রচারকদের আক্রমণাত্মক প্রচার আজও অব্যাহত ছিল।
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরারিয়ায় একটি জনসভায় আরজেডি-র এক দশকের শাসনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি আরজেডি-র ১৫ বছরের শাসনকালকে “কাট্টা, কাটূতা, ক্রূরতা, কুশাসন, কুসংস্কার এবং দুর্নীতির” যুগ বলে বর্ণনা করেন এবং “কুখ্যাত ‘Ks’ (Ks for কাট্টা ( দেশি পিস্তল ) , ক্রূড়তা , কুশাসন ইত্যাদি )”-এর কথা মনে করিয়ে দেন।
- জবাবে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা বর্তমান শাসনকে তাঁর পিতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, তাঁর (রাজীব গান্ধী) আমলে মানুষের বলার সুযোগ ছিল, কিন্তু এখন সর্বত্র ভয় বিরাজ করছে।
- কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মহাগঠবন্ধনকে “মহাঠগবন্ধন” বলে অভিহিত করেন এবং ভোটারদের বিহারে আবার “জঙ্গল রাজ” ফিরিয়ে না আনার জন্য সতর্ক করেন।
এদিকে, আরজেডি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে Janshakti Janata Dal (JJD) প্রার্থী হিসেবে মহুয়া আসন থেকে লড়ছেন তেজ প্রতাপ যাদব। তিনি তাঁর জয় সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী এবং মুখ্যমন্ত্রীর আসন দখলের আশা প্রকাশ করেছেন।
উত্তেজনা ও ভোটদানের হার
ভোটের উৎসাহের মাঝেই লখিসরাইয়ে উত্তেজনা দেখা যায়, যেখানে আরজেডি সমর্থকদের বিরুদ্ধে উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি প্রার্থী বিজয় কুমার সিনহা-র কনভয়ে আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রথম দফার নির্বাচনে ২৭.৬৫% ভোট পড়েছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোটদানের হার ছিল ১৩.১৩%। এর মধ্যে সহরসা জেলায় সর্বোচ্চ ১৫.২৭%, এরপর বেগুসরাই (১৪.৬%) এবং মুজফফরপুরে (১৪.৩৮%) ভোট পড়েছে।
প্রথম দিকেই ভোট দিয়েছেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় কুমার সিনহা, মহাগঠবন্ধন-এর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব, ভিআইপি প্রধান মুকেশ সাহানি, এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং ও রাজীব রঞ্জন সিং ‘লালন’। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর নিজ শহর বখতিয়ারপুরে ভোট দিতে যান এবং নাগরিকদের ভোট দেওয়াকে গণতন্ত্রের কর্তব্য বলে অভিহিত করেন।
Bihar Elections : ভোট ঘোষণা বিহারে , দুই দফায় হবে ২৪৩ আসনে নির্বাচন , গণনা দ্বিতীয় দফার ৩ দিনের মধ্যেই !
মুঙ্গেরে ২০ বছর পর ভোটের অধিকার পেল ভীমবাঁধ অঞ্চল
বিহার নির্বাচনের প্রথম পর্বে মুঙ্গের জেলার নকশাল-প্রভাবিত ভীমবাঁধ অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা ২০ বছর পর প্রথমবার ভোট দিলেন। নিরাপত্তার কারণে গত দুই দশক ধরে এই এলাকায় ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন পর শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এটিকে নকশাল প্রভাব দূরীকরণে গণতন্ত্রের এক বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ভোটকেন্দ্র পুনঃস্থাপন হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এক স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, “আমরা খুব ভালো অনুভব করছি। ২০০৫ সাল থেকে পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না… এখন আর কোনো ভয় নেই। ক্যাম্প (নিরাপত্তা বাহিনী) তৈরি হওয়ার পর থেকে আমরা শান্তিতে আছি। সরকার ভালো পরিষেবা দিচ্ছে। আমরা খুশি যে এখানে পোলিং বুথ তৈরি হয়েছে। যুবক-বৃদ্ধ সবাই ভোট দিতে পারছে…” অন্য এক তরুণ বলেন, জঙ্গলের ঝুঁকি পেরিয়ে ভোট দিতে যেতে হতো, এখন সেই সুবিধা পাওয়ায় তিনি পরিবর্তন ও যুবকদের জন্য কিছু করার আশা করছেন।



















