ব্যুরো নিউজ ২২শে আগস্ট ২০২৫ : ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার লোকসভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেছেন, যা প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে ৩০ দিনের জন্য আটক বা গ্রেপ্তার হলে তাঁদের পদ থেকে অপসারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এই বিলগুলি নিয়ে সংসদে ব্যাপক হট্টগোল এবং বিরোধী দলগুলির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। পরে শাহ জানান, বিলগুলি যৌথ সংসদীয় কমিটি (JPC)-তে পাঠানো হবে।
বিলগুলির মূল উদ্দেশ্য
পেশ করা তিনটি বিল হলো:
১. সংবিধান (একশো তিরিশতম সংশোধন) বিল, ২০২৫: এই বিলটি সংবিধানের ৭৫, ১৬৪ এবং ২৩৯এএ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গুরুতর অপরাধে ৩০ দিন বা তার বেশি সময় ধরে আটক থাকলে তাঁদের পদ থেকে অপসারণের আইনি কাঠামো তৈরি করা যায়।
২. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধন) বিল, ২০২৫: এই বিলটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের অপসারণের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিধান যোগ করবে, যা বর্তমান কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার আইন, ১৯৬৩-তে অনুপস্থিত।
৩. জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৫: ২০১৯ সালের জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনে মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের অপসারণের কোনো বিধান নেই। এই বিলটি সেই শূন্যতা পূরণ করবে। বিল অনুযায়ী, যদি মুখ্যমন্ত্রী ৩০ দিনের জন্য আটক থাকেন, তাঁকে ৩১তম দিনে পদত্যাগ করতে হবে, অন্যথায় তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ হারাবেন।
বিরোধীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
এই বিলগুলি পেশ করার পরপরই সংসদে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে যে, এই বিলগুলির উদ্দেশ্য হল বিজেপি-বিরোধী রাজ্য সরকারগুলিকে অস্থিতিশীল করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ক্ষমতা দেওয়া।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)-এর সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বিলগুলির বিরোধিতা করে বলেন, এগুলি “ক্ষমতার পৃথকীকরণ” নীতি লঙ্ঘন করে এবং জনগণের নির্বাচিত সরকারকে ধ্বংস করবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এর মাধ্যমে কেন্দ্র একটি “পুলিশ রাষ্ট্র” তৈরি করতে চাইছে।
কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি এই বিলগুলিকে ‘ধ্বংসাত্মক’ বলে অভিহিত করে বলেন, এটি ‘দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ’ থাকার মূল সাংবিধানিক নীতিকে লঙ্ঘন করে।
Kolkata Metro Rail : পুজোর আগেই উপহার! মোদীর হাত ধরে চালু হচ্ছে কলকাতার নতুন ৩টি মেট্রো রুট
সংসদীয় হট্টগোল ও বিলগুলি JPC-তে পাঠানো
সংসদের কার্যবিবরণীর সময় কিছু বিরোধী সাংসদ বিলগুলির অনুলিপি ছিঁড়ে অমিত শাহের দিকে ছুঁড়ে দেন। এরপরই অধিবেশন দুপুর ৩টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। কংগ্রেস সাংসদ কে.সি. ভেনুগোপাল সোহরাবুদ্দিন মামলায় শাহের ‘নৈতিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জবাবে শাহ বলেন, তিনি জেলে যাওয়ার আগে তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। অমিত শাহ পরে বিরোধীদের আচরণকে “জনগণের সামনে সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত” বলে মন্তব্য করেন।
তবে, সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে, এই বিলগুলির উদ্দেশ্য হল সাংবিধানিক নৈতিকতা, সুশাসন এবং জনগণের আস্থা বজায় রাখা। বিলটি এমন একটি ভারসাম্য তৈরি করতে চায়, যেখানে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উচ্চ সাংবিধানিক পদে থাকা থেকে বিরত রাখা যায়, কিন্তু একই সাথে তাঁদের রাজনৈতিক সুযোগ চিরতরে বন্ধ করা হয় না। আটক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পুনরায় পদে ফিরতে পারবেন। এই বিলগুলি এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পর্যালোচনা ও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।