ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিঃ ল্যাবরেটরির একটা ভুল রিপোর্ট কেড়ে নিতে বসেছিল এক তরুণীর মূল্যবান জীবন।হতদরিদ্র ও দিনমজুর বাবার বাড়িতে থেকেই দীর্ঘ সাত বছর ধরে তথাকথিত সামাজিক কলঙ্ক বহন করে একাকী লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ওই বিপন্ন তরুণী।কোনও এক সময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ মেশ পিছিয়ে আসেন নিজের শিশুকন্যার অসহায়তার কথা চিন্তা করে।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ কলকাতার লেক মার্কেটে মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ নামে এক ব্যাক্তির একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে গর্ভাবস্থায় রক্তের একাধিক পরীক্ষা করবার জন্য যান ওই তরুণী। দুর্ভাগ্যবশত সেখানকার রিপোর্ট কার্ডে দেখা যায় ওই তরুণী এইচআইভি পজিটিভ।
অভিযোগ, এই রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁর স্বামী তাঁকে ঘরছাড়া করেন। এমনকি সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার ফলে দীর্ঘদিন তাঁকে একঘরে হয়ে থাকতে হয়। এরপর নিজেকে স্বচ্ছ প্রমান করবার উদ্দশ্যে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ হাসপাতালে পুনরায় নমুনা পরীক্ষা করান ওই তরুণী। উভয় এইআইভি এলাইজা পরীক্ষার ফলাফলই নেগেটিভ আসে।
অভিযোগ, এরপরেও তরুণীর শ্বশুর বাড়ির লোক তাঁকে ঘরে ফেরাতে রাজি হয়নি। এরপর পঞ্চায়েত এবং প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোনরকম সুরাহা না মেলায় শেষমেশ ওই বেসরকারি ল্যাবরেটরির বিরুদ্ধে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয় সে।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে গত ৯ ই ফেব্রুয়ারি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক সমীক্ষা ভট্টাচার্য রায় দিতে গিয়ে ওই ল্যাবরেটরি এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের উদ্দেশ্যে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেন, “ কোনও রোগীকে এইচ আই ভি পজিটিভ বলে ঘোষণা করলে কেবল তিনিই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, তাঁর পরিবারেও নেমে আসে বিপর্যয়। রিপোর্ট দেওয়ার আগে ভালও ভাবে যাচাই করা দরকার। ওই ভুল রিপোর্টের জন্য তরুণী ও তাঁর পরিবার অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।”
নিন্দা করার পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ রায় বেরোনোর দেড় মাসের মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ওই ল্যাবরেটরি ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকে। এমনকি অনাদায়ে ধার্য ক্ষতিপূরণের ওপর বার্ষিক ৬% হারে সুদ দেওয়ারও নির্দেশ দেয় আদালত।
দেরিতে হলেও দীর্ঘ সাতটা বছর লড়াইয়ের পর অবশেষে আদালতে সুবিচার পাওয়ায় স্বস্তি পেল ওই তরুণী ও তাঁর পরিবার।