জুম্পা ব্যানার্জি, ১৯ জুনঃ (Latest News) শাস্ত্রে আছে রথের উপরে খর্বাকৃতি জগন্নাথকে দর্শন করলে তার পুনর্জন্ম হয় না। তাই রথের দড়ি ধরে রথ টানা মহাপুণ্য কর্ম বলে সনাতন ধর্মের মানুষদের বিশ্বাস।
‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ও ‘পদ্মপুরাণে’ও এই রথযাত্রার কথা লেখা উল্লেখ আছে। রথযাত্রায় বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব আমরা দেখতে পাই। হিন্দু সভ্যতার উত্থানকালে এ রথযাত্রা ‘শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা’ । ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ ধামের রথযাত্রা বিশ্ববিখ্যাত। ‘পুরুষোত্তম ক্ষেত্র’বা ‘শ্রীক্ষেত্র’ বলতে আমরা পুরীকেই বোঝায়। জ্যৈষ্ঠে স্নান-যাত্রায় ও আষাঢ়ে রথের সময় নিষ্ঠার সাথে জাঁকজমকের সঙ্গে পূজিত হন। চৈতন্য মহাপ্রভুই মূলত নীলাচলে ভক্তিবাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের অবতার। তাঁর প্রেম, ভক্তি ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ – এসব মূলমন্ত্রই তাঁর জীবন-দর্শন। রথের দর্শনে শ্রী চৈতন্যমহাপ্রভু নৃত্য করছেন। অপলক নয়নে দর্শন করছেন জগন্নাথ। রথ চলতে চলতে মাঝে মাঝে থেমে যায়।
এর কারণ রাধা ভাবে বিভোর মহাপ্রভুকে ভাল করে দেখার জন্য রথ একটু থামে আবার চলে। অনেক ভক্তের মাঝে মহাপ্রভুকে না দেখে জগন্নাথ থেমে যায়। রথ অপ্রকৃতি কারন তা প্রভু জগন্নাথের ইচ্ছা শক্তিতে রথ চলে।
মহাপ্রভুর জীবন-দর্শন শ্রী জগন্নাথের জীবন-দর্শন মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। তাই পুরীকে বলা হয় বৈষ্ণবের ধাম।
‘উৎকলখণ্ড’এবং ‘দেউল তোলা’নামক ওড়িশার প্রাচীন পুঁথিতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ইতিহাস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্যযুগে। সে সময় আজকের ওড়িশার নাম ছিল মালবদেশ। সেই মালবদেশের অবন্তীনগরী রাজ্যে ইন্দ্রদ্যুম্ন নামে সূর্যবংশীয় এক পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ছিলেন, যিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথরূপী মূর্তির রথযাত্রা শুরু করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। পরবর্তিকালে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রার প্রচলন করেন।
বড় ভাই বলরাম বা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন যাত্রার স্মারক। তিন জনের জন্য আলাদা আলাদা তিনটি রথ। রথযাত্রা উৎসবের মূল দর্শনীয় হল এই রথ তিনটি। প্রথমে যাত্রা শুরু করে বড় ভাই বলভদ্রের রথ। এই রথের নাম তালধ্বজ। রথটির চোদ্দোটি চাকা। উচ্চতা চুয়াল্লিশ ফুট। রথের আবরণের রঙ নীল। তারপর যাত্রা করে সুভদ্রার রথ। রথের নাম দর্পদলন। উচ্চতা প্রায় তেতাল্লিশ ফুট। এই রথের মোট বারোটি চাকা। যেহেতু রথটির ধ্বজা বা পতাকায় পদ্মচিহ্ন আঁকা রয়েছে তাই রথটিকে পদ্মধ্বজও বলা হয়ে থাকে। রথের আবরণের রঙ লাল। সবশেষে থাকে জগন্নাথদেবের রথ। রথটির নাম নন্দীঘোষ। পতাকায় কপিরাজ হনুমানের মূর্তি আঁকা রয়েছে তাই এই রথের আর একটি নাম কপিধ্বজ। রথটির উচ্চতা পঁয়তাল্লিশ ফুট। এতে ষোলোটি চাকা আছে। প্রতিটি চাকার ব্যাস সাত ফুট। রথটির আবরণের রঙ হলুদ। তিনটি রথের রঙ আলাদা হলেও প্রতিটি রথের উপরিভাগের রঙ লাল।
জয় জগন্নাথ……..
জগনাথের ভোগ কথা:
জগন্নাথের মধ্যে বিষ্ণুর সকল অবতারের চিহ্ন আছে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে বিষ্ণুর এক একটি অবতারের মূর্তিতে পুজো করা হয়। ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত করা হয় তাঁকে। আর সেই কারণে তাঁকেও অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ।
কথিত আছে, ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে তাঁর চার ধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল- বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারিকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন,তারপর গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন। আর পুরী ধামে যেখানে তিনি ভোজন করেন সেখানে ভোগের কোনও চমক থাকবে না এটা কখনও হয়। সেখানেই তাঁকে ছাপ্পান্ন ভোগ দেওয়া হয়।
বাল্যভোগে জগন্নাথদেবকে দেওয়া হয় খই, চিঁড়ে, বাতাসা, মাখন, মিছরি, কলা, দই এবং নারকেল কোরা। এরপর দেওয়া হয় রাজা ভোগ। এই তালিকায় থাকে মিষ্টি চালের খিচুড়ি, ডাল, তরকারি, ভাজা এবং পিঠেপুলি। দুপুরের ভোগ মূলত অন্নভোগ। সেখানে থাকে ভাত, ডাল, শুক্তো, তরকারি ও পরমাণ্ণ। এছাড়াও থাকে ক্ষীর ও মালপোয়া। সন্ধেবেলায় দেওয়া হয় লেবু, দই দিয়ে মাখা পান্তাভাত। সঙ্গে খাজা, গজায এবং নানা ধরনের মিষ্টি। রাত ১১টার সময় ভাজা ও ক্ষীর দেওয়া হয় তাঁকে। আর মধ্যরাতে ডাবের জল খেয়ে শুতে যান ভগবান। এভাবেই তাঁক ছাপ্পান্ন ভোগ অর্পণ করা হয়ে থাকে। (EVM News)
জয় জগন্নাথ!!!