রত্ন

ডঃ জয়ন্ত তপাদার, ১০ অক্টোবর: ভুল রত্নে লক্ষ্মী লাভ তো হবেই না হতে পারে চরম ক্ষতি

এই কলি যুগে লক্ষী বলতে আমরা সবাই অর্থ-ধনসম্পদকেই বুঝি। প্রত্যেকটি মানুষকে প্রত্যেকদিন যার যার নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল কি গ্রহরত্ন ধারণ করলে এই লক্ষ্মী লাভ অর্থাৎ ধনসম্পদ প্রাপ্তি হবে?

অনেকের মনে হতে পারে, নামী গ্রহরত্নের দোকান থেকে দামি দামি রত্ন, হীরা, নীলা, পোখরাজ ইত্যাদি কিনে নিয়ে হাতে ধারণ করলেই বোধহয় দুর্ভাগ্য কাটিয়ে সৌভাগ্য ফিরে আসবে। আকাশ থেকে প্রচুর অর্থ সম্পদ বৃষ্টির মতো ঝরে ঝরে পড়বে। বাস্তবে তা কখনোই হয় না বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল গ্রহরত্ন ধারণ করে অনেক মানুষই ধনে প্রাণে সর্বশান্ত হয়েছেন।

আমরা যদি ভারতবর্ষের ইতিহাস খুলে দেখি, তাহলে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের কোহিনুর হীরা পড়বার ফল কী হয়েছিল তা আমরা সবাই জানি। যে ওনার বিলাসিতা সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছিল। নিজের স্ত্রীর সমাধিস্থলে সৌধ তৈরি করতে গিয়ে বহু অর্থের অপচয় করেছিলেন। নিজের জীবিত কালে দেখতে হয়েছে এক পুত্রের হাতে অন্য পুত্রদের হত্যাকান্ড। নিজেকে ও কন্যা জাহানারাকে পুত্র ঔরঙ্গজেবের হাতে আমৃত্যু বন্দী দশাতে থাকতে হয়েছে। হতে পারে শাহজাহান একজন সম্রাট হয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও ছিলেন এ পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া একজন মানুষ। তাই তার ব্যক্তিগত যে জন্ম ছক ছিল তার জন্ম ছক অনুযায়ী হীরা রত্নটি তার জন্য ছিল বিষ তুল্য। যেটা তার বোধগম্য হয়নি।

আমার চেম্বারে যারা দেখাতে আসেন তাদের দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল রত্ন হাত থেকে খুলিয়েছি। অবশ্যই প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন রত্ন পরে কি কি ক্ষতি হয়েছে তার যুক্তিপূর্ণ প্রমাণ দিয়ে তবেই এই ভুল রত্ন খোলানো হয়েছে।

জন্মকুণ্ডলীতেই লুকিয়ে সমস্যা মুক্তির চাবিকাঠি

এবার মূল বিষয়ে আসা যাক। লক্ষ্মী অর্থাৎ অর্থ-সম্পদ লাভের জন্য কি গ্রহরত্ন ধারণ করবেন এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার হরোস্কোপ বা জন্ম ছক কি সংকেত বহন করছে তার ওপর।

হরোস্কোপে লগ্নকে (জাতক বা জাতিকার নিজে) প্রথম ভাব বা ঘর ধরে নিয়ে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে মোট বারোটি ভাব বা ঘরকে গণনা করা হয় ফলাদেশের জন্য। দ্বিতীয় ভাবকেই ধনভাব, সঞ্চয় ভাব বা সম্পত্তির ভাব হিসেবে গণ্য করা হয়। যেটা আজকের মূল আলোচ্য বিষয়।

দশম ভাব কর্ম বা জীবিকা। আর একাদশ ভাব থেকে সমস্ত কিছুর সাফল্য কি পরিমান হবে তা বিচার করা হয়। এই প্রসঙ্গে এটা জানিয়ে রাখি যে ষষ্ঠ, অষ্টম বা দ্বাদশ ভাবকে সাধারণত অশুভ ভাব বা ঘর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দ্বিতীয় ভাবের সঙ্গে এই তিনটি ভাবের যদি কোনও ভাবে নাক্ষত্রিক সংযোগ, দৃষ্টি বা ক্ষেত্র বিনিময় ঘটে তবে ধনস্থান অশুভ ফল দান করে। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, একটি সিংহ লগ্নের জাতক বা জাতিকার দ্বিতীয় ভাব ও একাদশ ভাব হয় বুধের অধীনস্থ ঘর বা ভাব।

এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ভাব কন্যা (ধন ভাব) ও একাদশ ভাব হল মিঠুন রাশির ঘর। এক্ষেত্রে বুধ যদি শুভ অবস্থান অর্থাৎ কেন্দ্র বা কোণে এবং শুভ নক্ষত্রপ্রাপ্ত হয় তবে বুধের রত্ন পান্না ধারণ সিংহ লগ্নে জাতক ব্যক্তির ধনসম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি কোনওভাবে দ্বিতীয় প্রতি বুধ ষষ্ঠভাব শনি, অষ্টম ভাব বৃহস্পতি বা দ্বাদশ ভাব চন্দ্রের সঙ্গে দৃষ্টি বা যুক্ত হয় বা বুধ ষষ্ঠ,অষ্টম বা দ্বাদশে অবস্থান করে তবে ওই বুধের রত্ন পান্না ধারণই ওই সিংহ লগ্নের জাতক বা জাতিকার আর্থিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

যেমন তুলা লগ্নের কোনও জাতক বা জাতিকার দ্বিতীয়পতি বা ধনপতি গ্রহ মঙ্গল। এই মঙ্গল যদি ষষ্ঠে অর্থাৎ মীন রাশিতে বা অষ্টমে অর্থাৎ বৃষ রাশিতে দ্বাদশে অর্থাৎ কন্যাতে অবস্থান করে বা ওই ভাব গুলোর সঙ্গে নাক্ষত্রিক সংযোগ বা ওই ষষ্ঠ অষ্টম বা দ্বাদশ ভাবে দৃষ্ট হয় তবে ওই তুলা লগ্নের জাতকের মঙ্গলের রত্ন কোরাল বা প্রবাল ধারণ করবে।

মনে করুন কারো লগ্ন কুম্ভ, এক্ষেত্রে দ্বিতীয়পতি বা ধনপতি আর একাদশপতি বা আয়পতি গ্রহ হল বৃহস্পতি। এই বৃহস্পতি যখন দ্বিতীয় ভাব বা একাদশ ভাবে অবস্থান করবে বা কোন নাক্ষত্রিক সংযোগ করবে তখন জাতক যে শুভ ফল লাভ করবে ঠিক ওই বৃহস্পতি যদি অষ্টম ভাব অর্থাৎ কন্যা বা দ্বাদশ ভাব মকরে (মকর রাশিতে বৃহস্পতি নিচস্থ হয়) অবস্থান করে বা ওই ভাব দুটোর সঙ্গে কোন নাক্ষত্রিক সংযোগ করে তবে ওই জাতকের পক্ষে অর্থ সম্পদ সঞ্চয়ের ব্যাপারে ওই বৃহস্পতি গ্রহই ভয়ানক ক্ষতিকর ফল প্রদান করবে। ধন স্থানে বা দ্বিতীয়ভাবে রাহু বা কেতু অবস্থান করে যদি কালসর্প যোগ নির্মাণ করে অথবা দ্বিতীয় শনি বা নীচস্থ মঙ্গল ইত্যাদি অবস্থান করে তবে একই ভাবে অর্থ সম্পদের ব্যাপারে খারাপ ফল প্রদান করবে ওই গ্রহ সকল।

এ প্রসঙ্গে হঠাৎ মনে পড়ে গেল যে প্রায় বছরখানেক আগে এক সন্ধ্যায় একজন ভদ্রলোক আমার চেম্বারে দেখাতে এলেন ভীষণ বিষন্ন কাচুমাচু মুখে। এসে তিনি জানালেন যে তার ব্যবসা একসময় খুব ভালোই চলতো। বেশ কয়েকজন কর্মচারী ও ছিল। কিন্তু আজ ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসে নিঃস্ব সর্বশান্ত। আগামী দিনে বাজার করবার অর্থ কিভাবে সংস্থান হবে তা ভেবেই চিন্তিত। অথচ আমি তার হরোস্কোপ বিচার করে এমন কিছুই খুঁজে পেলাম না যাতে তার এইরকম দুরবস্থা হতে পারে। তারপরে আমার নজরে এলো দুহাতের আঙ্গুলে ছটি রত্ন ধারণ করা রয়েছে।

এবার কারণটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। ভদ্রলোকের ডিএপি অর্থাৎ দশা ,অন্তর্দশা, প্রত্যন্তরদশা যখন অশুভ ছিল তখন কারো পাল্লায় পড়ে কোন অর্ধ শিক্ষিত জ্যোতিষী যে জন্ম ছকটাকে ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণে করতে সমর্থ নন, তার পরামর্শে বিষতুল্য কিছু রত্ন ধারণ করায় তার এই করুণ পরিণতি হয়েছে।

আপনার ভাগ্য বিচার সঠিক হলে আপনার জীবনের মোড় ঘুরে যাবে, ঠিক তেমনি ভুল রত্ন ধারণে আপনার অর্থক্ষয় থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই মনে বিশ্বাস নিয়ে একজন শিক্ষিত পণ্ডিত জ্যোতিষীর হাত ধরুন আশা করি উনি আপনাকে সমস্যার বৈতরণী পার করে দেবেন ঈশ্বরের কৃপায়। ডঃ জয়ন্ত তপাদার (জ্যোতিষ রত্ন উপাধি) যোগাযোগ- ৮২৫০৬২৭২০৩/ ৯৪৭৪৭৩২৯০১। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর