ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ৮ মেঃ একদিকে আওয়াজ উঠছে ‘God save the king’, ‘Long live the King’. আর একদিকে কয়েক হাজার জনতার চিৎকার – ‘Not My King’ অভাবনীয়। ব্রিটেনে এই প্রতিবাদ আগে দেখা যায়নি। কারণ চিরকালই রাজা বা রানীকে শিরোধার্য করে রেখেছিলেন বৃটেনের জনগণ। রাজতন্ত্র ব্রিটেনের ঐতিহ্যের প্রতীক, ব্রিটিশ আভিজাত্যের প্রতীক। এক সময় বলা হত The Sun Never Sets in British Empire – ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য কখনো অস্ত যায় না।
কিন্তু সময় বদলেছে। এই ব্রিটেন আর ১০০ বছর আগেকার ব্রিটেন নয়। রাজপরিবারও কৌলিন্য হারিয়ে ফেলেছে বোধহয় বেশ খানিকটা। যদি তা নাও হয়, জনপ্রিয়তা যে কমেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
রানিং দ্বিতীয় এলিজাবেথ পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল। কিন্তু তাঁর বড় ছেলে প্রিন্স চার্লস সে অর্থে জনপ্রিয় হতে পারেননি কোনোদিনই। তাঁর প্রেমিকা ক্যামিলা পার্কার বোলসকে তো পছন্দ করেন না সে দেশের সিংহভাগ মানুষ।
একজন পারতেন রাজপরিবারের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে। প্রিন্সেস ডায়ানা – দ্য লেডি চার্ম। আপামর ব্রিটেনবাসীর বড় আদরের, ভালোবাসার পাত্রী। কিন্তু রাজ পরিবারের চক্ষুশূল। ডায়ানার আমজনতার সঙ্গে খোলা মনে চলা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ একেবারেই না-পসন্দ ছিল। তার ওপর চার্লসের ক্যামিলা প্রেম। পরিণামে ডায়ানার নিঃসঙ্গতা, শেষে নতুন প্রেমিকের সঙ্গে চলাফেরা, চরম পরিণতি গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু। লেডি ডি-র এই পরিণতির জন্য বৃটেনের মানুষ কিন্তু আজও দায়ী করেন একাধারে রাজ পরিবারকে, অন্যদিকে ক্যামিলা- চার্লস-কে। তাও একরকম ছিল। অপছন্দ ছিল, বিদ্রোহ ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ব্রিটেন যে অর্থসংকটে পড়েছে তা অভাবনীয়। গ্যাসের দাম আকাশ ছোঁয়া, দেশের অর্ধেক মানুষ বিদ্যুৎ কিনতে পারছেন না, বেকারত্ব ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, চিকিৎসা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মানুষ ক্ষিপ্ত। এই অবস্থায় ভারতীয় মুদ্রার হিসেবে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে চার্লসের রাজ্যাভিষেক হল। প্রিন্স চার্লস ৭৪ বছর বয়সে হলেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
কিন্তু ভয়ংকর মন্দার সময় এই বিরাট আয়োজন, বিপুল খরচ ভালো চোখে নেননি ব্রিটেনবাসী। তাই বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখালেন। স্লোগান উঠলো, NOT MY KING – এই রাজা আমার রাজা নয়। অভূতপূর্ব। এই প্রতিবাদ আগে কখনো দেখেনি ব্রিটিশ রাজতন্ত্র। এবারই প্রথম দেখলো। আর এই প্রতিবাদ বুঝিয়ে দিয়ে গেল, বৃটেনের প্রাতিষ্ঠানিক রাজতন্ত্র তার প্রাসঙ্গিকতা হারাতে বসেছে।(EVM News)
