ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২২ এপিলঃ একটা মজার প্রশ্ন ছিল, কেউ যদি তোকে টাকা দেয় অথবা বুদ্ধি দেয়, কোনটা চাইবি? সবাই বলত বুদ্ধি। টাকা চেয়ে কেউ লোভী বনতে চাইত না। আর যেই বলত, বুদ্ধি নেব। আমরা বলতাম বোকা বোকা, তাই বুদ্ধি চায়। যার যেটা কম, সে তো সেটাই চাইবে। “…… আজ সেই দিন গিয়েছে। বুদ্ধি আরও বুদ্ধি দরকার এই দুনিয়ায় টিকে থাকতে গেলে। আর তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সন্ধানে এগিয়েছে বিজ্ঞান। আজ তার হাতে এসেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

নমুনা আমরা পাচ্ছিলাম কিছুদিন আগে থেকেই। গুগুলে যদি লেখেন Saikoloji সে কয়েকটা বিকল্পের মধ্যে Psychology দেখিয়ে দিচ্ছে। ‘skul’ লিখলে school দেখাচ্ছে। অর্থাৎ সে বুঝে নিচ্ছে আমি কি চাই। এই বুঝে নেওয়ার ক্ষমতাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এই যে বুঝে নেওয়া লিখলাম, বুঝের পরই সফটওয়্যার নেওয়া শব্দটি দেখিয়ে দিল, টাইপ করতে হল না। অর্থাৎ আমি কি চাইছি যন্ত্র বুঝে নিতে পারছে সেটা। আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে আলোড়ন ফেলে আমাদের হাতে এসেছে চ্যাট জিপিটি।

ইংরেজি ভাষায় Chat GPT-এর পূর্ণরূপ হল Chat Generative Pre-Trained Transformer. এটি ওপেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা তৈরি করা হয়েছে যা এক ধরনের চ্যাট বট।এটি ২০২২ সালে ৩০ নভেম্বর চালু করা হয়েছে,এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় 3 মিলিয়নে পৌঁছেছে।মনে করা হচ্ছে এটি দ্রুত গুগুলকে টেক্কা দেবে। 2015 সালে স্যাম অল্টম্যান নামে এক ব্যক্তি এটির গবেষণার সূচনা করেন বর্তমানে মাইক্রোসফট কোম্পানির বিল গেটস এতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। কারন তিনি বুঝে গেছেন আগামী দিনের সাইবার জগত শাসন করবে এটি।

কি দেবে এই chatgpt? আমি যা ইনফরমেশন চাইছি সব সে দেবে chat এর মত করে বা লিখে লিখে। সে তো গুগুল ও দেয়? কিন্তু তার সঙ্গে এর তফাৎ হল, গুগুল কিছু সাইট বা লিংক দেবে, আর এ সমস্ত লিংক থেকে তথ্য বেছে নিয়ে আমার কাছে পরিবেশন করবে। যে কোন রকম অফিসিয়াল লেটার তার কাছে চাইলে সে শুধু নাম আর ডেজিগনেশন বাদ রেখে সেই বিষয়ের ওপর মুহূর্তে চিঠি লিখে দিচ্ছে।এখন সে শুধু ইংরাজি ভাষায় উত্তর দিচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই সে সব ভাষায় আসতে চলেছে। শুধু তাই নয়, শুনছি যে ভাবে কাজ হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই আপনি তাকে একটি মাধ্যমিক সিলেবাসের মধ্যে ইতিহাসের, বাংলার, কি অংক বিজ্ঞানের একটি প্রশ্নপত্র বানিয়ে দিতে বললে, সে মুহূর্তে নিজে question pattern জেনে নেবে, সিলেবাস জেনে নেবে তার বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে, তারপর এক মিনিটের মধ্যে হাতে গরম মডেল প্রশ্ন রেডি। তার উত্তর করে দিতে বলুন, মুহূর্তে করে দেবে। টিচারের দরকার নেই।

একই ভাবে শোনা যাচ্ছে, সবার কর্মক্ষমতা বা দক্ষতা গ্রাস করতে আসছে সে। কোনও বিষয়ে মামলা করতে চান, উকিলের দরকার নেই, আপনি বিষয় বলুন, সে আপনাকে সমস্ত ধারা লিখে দেবে। একটা স্কোয়ার ফুটের মাপ বলে দিন সে বাড়ির কয়েকশ প্ল্যান বানিয়ে দেবে। ব্রিজ থেকে রাস্তার প্ল্যান বাজেট সব সে ফটাকসে করে দেবে। শুধু তাই নয় আপনার শরীর খারাপ, ওকে জানান, সে ওষুধ থেকে টেস্ট সব বলে দেবে। টেস্টের রিপোর্ট তাকে দিন, বাকি ডাক্তারের দায়িত্ব সে নেবে। শুনছি এক্স রে, এম আর আই এর ছবি সে স্ক্যান করে কোথায় প্রবলেম , এবং কি তার সঠিক চিকিৎসা, সে বলে দেবে। অপ্রয়োজনীয় অপারেশনের যে অভিযোগ ওঠে, অহেতুক টেস্ট করানোর যে ক্ষোভ দেখতে পাই, সেসবের যুগ শেষ করে দেবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।সয়েল টেস্ট এর রিপোর্ট দিন, আকরিক আছে কিনা থেকে এখানে কি কি চাষ হতে পারে সব উত্তর আছে এর কাছে।এবং সেই তথ্য একদম নিখুঁত। মানুষের দক্ষতা তার কাছে পাত্তা পাবে না। আরও আছে, শুনছি কিছুদিনের মধ্যেই নাকি প্রেম পত্র, প্রেম বা বিরহের কবিতাও লিখে দেবে সে। কিভাবে দেবে? নানা প্রেমের কবিতা স্ক্যান করবে, শব্দ চয়ন করবে, ঝেড়ে দেবে।

কিন্তু তাহলে এতো পড়াশোনা, মেধা, বুদ্ধি, জ্ঞান সব কি বাতিল হতে চলেছে? আপনার ভাবনা, আপনার মনন সব গ্রাস করে নেবে যন্ত্র! উচ্চশিক্ষার দাম নেই। সবাই বেকার, আসল ওই যন্ত্র! কি করবে পরবর্তী প্রজন্ম? যেমন করে অশোকের কর্মহীন সেনারা গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছিল। যেমন করে ল্যান্ড ফোন, অ্যানালগ ক্যামেরা গুরুত্বহীন হয়ে গেল দৌড়ে টিকতে না পেরে, মানুষও কি সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি? জানি না যন্ত্র ফ্র্যাংকেন্সটাইন হয়ে উঠবে কি না?

একদিন আপনি হয়ত বললেন, আমার জন্য রবি ঠাকুরের একটা উপযুক্ত কবিতা চাই। স্ক্রিন লিখে দেবে……
“ঢাকো তবে ঢাকো মুখ,নিয়ে যাও দুঃখ সুখ,চেয়ো না চেয়ো না ফিরে ফিরে।হেথায় আলয় নাহি,অনন্তের পানে চাহি,আঁধারে মিলাও ধীরে ধীরে।” (EVM News)

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর