ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২০ ফেব্রুয়ারিঃ রবিবার দুপুরে হঠাৎ কেঁপে উঠলো অরুণাচলপ্রদেশের পশ্চিমাংশ। সিকিম মেঘালয়ের পর অরুণাচলপ্রদেশ। উত্তরপূর্ব ভারতের পাহাড় অধ্যুষিত এই রাজ্যগুলিতে একের পর এক ভূকম্প ঘটে যাচ্ছে, অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অরুণাচলপ্রদেশে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৩.৮। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি বা এনসিএস জানিয়েছে, ভুটান সিমান্তের কাছে পশ্চিম কামেংয়ের ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল। শুধু অরুণাচলপ্রদেশের পাশাপাশি উত্তর-মধ্য অসম ও ভুটানের পূর্বদিকেও এই কম্পন হয়েছে। তবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি বলে খবর। কিন্তু কেন বারবার কম্পন দেখা দিচ্ছে?
ভূবিজ্ঞানীদের মতে, হিমালয়ের ভূগর্ভস্থ অঞ্চলে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের মধ্যে ঘর্ষণের ফলেই এই এলাকাটি বেশি মাত্রায় ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠছে। এই দুটি প্লেট একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণের সময় যখনই ইন্ডিয়ান প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের নীচে ঢুকে যাচ্ছে সেইসময় মাটির নিচে থাকা বিশাল এক শক্তি বেরিয়ে আসছে। যার ফলে নির্গত সেই শক্তির পরিসর ঠিক কতখানি তা আগে থেকে নির্ণয় খুব কঠিন। তবে ভুঅভ্যন্তরে বছরে ১০-৪০ মিলিমিটার পাত সঞ্চালন ঘটে থাকে। যখন কোনও অঞ্চলে সেই সঞ্চালনের মাত্রা বেশী হয় তখন সেই অঞ্চলটি অতিরিক্ত মাত্রায় ভূকম্পপ্রবণ হয়ে ওঠে।
যদিও ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির ডিরেক্টর ওপি মিশ্র বলেন, ভুঅভ্যন্তরে ছোট ছোট কম্পনগুলো ভারতকে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করছে। কারণ, টেকটনিক প্লেটের সঞ্চালনের ফলে সিসমিক ওয়েভ বা তরঙ্গ ভুস্তর থেকে বাইরে নির্গত হয়। সেই তরঙ্গ ভুস্তরে সুপ্ত অবস্থায় থাকলে অনেক বড় বিপদও হতে পারে। তাই ভুঅভ্যন্তরে চাপ সৃষ্টির ফলে সেই চাপ অল্প মাত্রার কম্পনের ফলে বাইরে বেরিয়ে এসে ধ্বংসাত্মক কম্পনের হাত থেকে রক্ষা করে ভূপৃষ্ঠকে। ফলে মাইক্রলেভেলের এই ভূমিকম্প দেশের জন্য স্বাস্থ্যকর। ভারতের অনেক জায়গাতেই এই মাইক্রকম্পন অনুভূত হয়।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে, বড় কোনও ধ্বংসাত্মক কম্পনের আশঙ্কা একদমই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তার কারণ, গোটা হিমালয়ের প্রকৃতির ওপর যে হারে আঘাত হানা হচ্ছে তাতে দুশ্চিন্তা রয়েই যাচ্ছে। জঙ্গল নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভূমিকম্পপ্রবন এলাকাতেই বাড়ি, ঘর, হোটেল তৈরি করা হচ্ছে। আর এইসবের জন্যই ভবিষ্যতে নেপাল, সিকিম, কাশ্মীর অথবা অসম ইত্যাদি পাহাড়ি ভূমিকম্পপ্রবন এলাকায় ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হতে পারে বলে চিন্তিত বিজ্ঞানী মহল।
গতকালের ভূমিকম্পের আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরেও অরুণাচলপ্রদেশে কম্পন অনুভত হয়। সেইসময় রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩.৭। এরপর এই বছর ফেব্রুয়ারিতে অসমেও ভূমিকম্প হয়। এরপর পরই সিকিম, মেঘালয়েও কম্পন অনুভূত হয়েছে।