ইভিএম নিউজ, ৯ মার্চঃ প্রযুক্তির দেশ জাপানে কি জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে? সম্প্রতি সেদেশের একটি সরকারি সমীক্ষার রিপোর্টে এসংক্রান্ত খবর প্রকাশ্যে আসতেই উদ্বেগ ঘনিয়েছে সেখানকার সরকারের অন্দরে। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। জাপানে বহু পুরুষ ও মহিলাই আজকাল সন্তানের জন্ম দিতে রাজি হচ্ছেন না। কারণ মূলত আর্থ সামাজিক চাপ। জাপানের জীবন যাত্রা অনেক পশ্চিমী দেশের তুলনায় ব্যয়বহুল। ফলে সেই দেশে পুরুষ ও মহিলারা চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করার চেষ্টা করেন। শেয়ার মার্কেট সহ বিভিন্ন অর্থকরী সংস্থায় লগ্নি করেন।
সেদেশে শুধুই ঘর কন্যার কাজ সামলান এমন মহিলার সংখ্যা দেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের সংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ। সেই ৮ শতাংসের আবার ৯০ শতাংশেরও বেশী থাকেন গ্রামে। মোটামুটি মধ্যবিত্ত জীবনধারণ করতে গেলেও সেদেশে দরকার হয় যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ। যার ফলে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই উপার্জন করতে হয়। সাধারণ চাকরি থেকে যা আয় হয় তাতে সংসার চলতে চায় না। তাই বাড়তি রোজগারের জন্য সবসময়ই চেষ্টা করতে হয় তাদের। এই চাপ সামলাতে গিয়ে সাংসারিক ও পারিবারিক ক্ষেত্র রীতিমতো অবহেলিত হয়ে পড়ছে। বাড়তি রোজগারের এই চাপ সামলাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বহু দম্পতি সন্তান বিমুখ।
কিন্তু এই পরিসংখ্যান পেয়েই প্রমাদ গুনছে জাপ সরকার। জন্মহার এইভাবে পেতে থাকলে জাপানি জাতির অস্তিত্বই মুছে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশের অস্তিত্বই থাকবে না আর। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেই বিবৃতিতে জানানো হয়, জাপানে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। জন্মহার যদি এইভাবে কমতে থাকে তবে সমাজের নিরাপত্তা বিনাশের পথে এগোবে। তার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও ভেঙে যেতে পারে।
কি কারণে কমছে জন্মহার? ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি’ সরকারি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সি পুরুষ ও মহিলারা বিয়ে করতেই রাজি নয়। পুরুষের মধ্যে ১৭.৩ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে ১৪.৬ শতাংশ বিয়ে না করার সিদ্ধান্তেই অনড়। এর ফলে জাপানে জন্মহারের সংখ্যা দ্রুত গতিতে কমেছে। ২০২২ সালে সবচেয়ে কম শিশু জন্মেছে জাপানে। যা জাপানের রেকর্ডে এই প্রথম। যা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জাপান সরকারের।
এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাসকো মেরি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ পায় জাপানে। সেই রিপোর্টে দেখা যায়, গত বছরে জন্মহার কমে গিয়েছে রেকর্ডহারে। পাশাপাশি মৃত্যুহার তুঙ্গে। গত বছর প্রায় ৮ লক্ষ শিশুর জন্ম হয়। অন্যদিকে মৃত্যুহার তার দ্বিগুন। প্রায় ১.৫৮ মিলিয়ন মানুষের গত বছরে মৃত্যু হয়েছে জাপানে। তাই চিন্তিত জাপান সরকার। জন্মহার এইভাবে কমতে থাকলে মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে জাপান”।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কয়েক বছর আগেও জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২৮ মিলিয়ন। গত বছরের এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ৪ মিলিয়ন কমে সেই জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৪ মিলিয়নে। এমন গতিতে জন্মহার কমলে বিপদ বাড়বে বলেই আশঙ্কা দেশের সরকারের।