মাধব দেবনাথ,নদিয়া: ‘বহিরাগত’-র পর, এবার ‘গব্বর সিং’। সঙ্গে, ‘ছাগলের তৃতীয় সন্তান’। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের নীচুতলাকে অক্সিজেন দিতে, এহেন মেঠোভাষাতেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে আক্রমণ করলেন, রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সর্বভারতীয় সভাপতি পদে আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত মেয়াদবৃদ্ধির পর, প্রথমবার বাংলায় এসেছিলেন, জেপি নাড্ডা। দিনতিনেক আগের সেই বঙ্গসফরে এসে নদীয়ার বেথুয়াডহরির এক জনসভা থেকে, রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক একাধিক দুর্নীতি নিয়ে তোপ দেগেছিলেন নাড্ডা। রাজ্যের শাসকদলকে উৎখাত করতে, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তেও আহ্বান জানিয়েছিলেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। এবার পাল্টা তাঁকে আক্রমণ করতে, সেই নদীয়াকেই বেছে নিল রাজ্যের শাসকদল। শনিবার রানাঘাট পুরসভার একাধিক সরকারি প্রকল্পের প্রচার করতে এসেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষনেতা তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আর সরকারি প্রকল্পের সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে রীতিমত অশালীন আর মেঠোভাষায় আক্রমণ শানালেন, ববি হাকিম। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় প্রচারে এসে, নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা থেকে যোগী আদিত্যনাথ সকলেই স্লোগান তুলেছিলেন, ‘আগলেবার দো’শ পার’। নদীয়ার সরকারি মঞ্চ থেকে শনিবার সেই পুরনো স্লোগানটিকে উস্কে দিয়ে, মন্ত্রী ফিরহাদ বলেন, যতই ২০০ ২০০ করুন, ২০০-র গণ্ডী কোনওদিন পেরোতে পারবেন না।
এখানেই না থেমে, এরপর দলের নীচুতলার কর্মীসমর্থকদের খানিকটা উজ্জীবিত করার ঢংয়েই হাকিম বলেন, “আবাস যোজনা তালিকা নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরেই, যোগ্য বাড়ি-প্রাপকদের খুঁজে বের করতে, সেই তালিকা বাতিল করে দিয়েছিলেন, স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার সেই উদ্যোগেই, একটি তৃতীয়পক্ষকে দিয়ে আবাস যোজনা তালিকা যাচাই করার পর, সেই তালিকায় থাকা প্রায় ১৭ লক্ষ অযোগ্য আবেদনকারীর নাম বাদ পড়েছে। কিন্তু এই খবর বিরোধীদলগুলোর কাছে ছিল না। পরে মাধ্যমের সূত্রে সেই সত্যিটা জানতে পেরেই নিজেদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পেতে, ছাগলের তিননম্বর বাচ্চার মতো লাফাতে লাফাতে বাংলায় চলে এসেছে।” আর এরপরেই বিহীন ভাষায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে “গব্বর সিং” বলেও কটাক্ষ করেন, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
প্রসঙ্গত, আবাস যোজনায় দুর্নীতিতে, জেলায় জেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় আপাতত বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে, রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলকে ঘেরাও করে একশোদিনের বকেয়া টাকার দাবি তোলার জন্যও, পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা প্রান্তিক আর সাধারণ মানুষকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। সেটা যে নিছকই কোনও কথার কথা নয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে, বেশ কয়েকটি জেলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের ঘেরাও হওয়ার ঘটনায়। যা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পালটা সুর ছড়িয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্ন একশোদিনের প্রকল্প নিয়েও দুর্নীতিতে জড়িয়েছিলেন রাজ্যের সরকারিদলের জেলা নেতাদের একটা বড় অংশ। সরকারি টাকার অপব্যবহার রুখতেই, এনিয়ে তদন্ত আর সমীক্ষার জোড়া ছাঁকনি বসিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর সেই ছাকনিতেই কিছু কিছু জায়গায়, ১০০ দিনের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় টাকা কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের মুখ বাঁচাতে রাজ্যের সরকার কয়েকটি জেলায় ফের স্বচ্ছ্বভাবে গরিব মানুষের ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করায়, সেই বকেয়া টাকার অনেকটাই পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে শনিবার নদীয়ার সরকারি মঞ্চ থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করে ফিরহাদ হাকিম দাবি করেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা থেকে যে করের টাকা নিয়ে যায়, তারই একটা অংশ এখানকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ করে। এটা কোনও দয়ার টাকা নয়। বিজেপির পিতৃকুলের টাকাও নয়। এটা বাংলার মানুষের অধিকারের টাকা।” যা শুনে রাজ্য বিজেপির পাল্টা প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ খরচে, রাজ্যের ভাগও রয়েছে। সেটাও রাজ্যবাসীর করের টাকা। তৃণমূলের নিজস্ব টাকা নয়। তাহলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মাত্র ৪০ ভাগ খরচ করে, রাজ্যের শাসকদলই বা কেন, নিজেদের কৃতিত্ব প্রচার করবে?

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর