ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১৮ জুনঃ (Latest News) 

পাপের প্রায়শ্চিত্তের ও যে  প্রায়শ্চিত্ত হয়, এবার তা দক্ষিন দিনাজপুর জেলায় প্রমান করে ছাড়ল তৃণমূল দল। যা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে তো বটেই জেলার সর্বস্তরের কাছেই চর্চার বিষয় উঠেছে। বিজেপি তো একে জুতো মেরে গরু দান বলে কটাক্ষ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। যদিও একে পাপের প্রায়শ্চিত্ত মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি আদিবাসিদের যোগ্য সম্মান দেওয়া।

পঞ্চায়েত  ভোট ঘোষনার দুমাস আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার জন্য দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে চার আদিবাসী মহিলাকে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করাতে প্রকাশ্য ভরা রাস্তায়  দণ্ডি কাটানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সে সময় ওই ঘটনা গোটা রাজ্যেই শোরগোল ফেলেছিল। নিন্দার ঝড় উঠেছিল সর্বত্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে নবজোয়ার অভিযানে জেলায়  এসে তপনের ওই আদিবাসি গ্রামে গিয়ে  ঘটা করে প্রকাশ্যে ওই চার মহিলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চেয়ে নিতে বাধ্য হন স্বয়ং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে সেই চার আদিবাসী মহিলার মধ্যে এক জন শিউলি মার্ডিকে প্রার্থী করল শাসকদল। বিরোধীদের কটাক্ষ, শাসকদল যে ঘটনা ঘটিয়েছিল, তার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতেই এই চমক। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।

গত ৭ এপ্রিল রাতে বালুরঘাটের তপনে অন্তত ২০০ জন স্থানীয় মহিলা এবং তাঁদের পরিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন শনকইর গ্রামের বাসিন্দা মার্টিনা কিস্কু,  শিউলি মারডি,  ঠাকরান সোরেন এবং মালতী মুর্মু। সেই সময় অভিযোগ উঠেছিল, বিজেপি থেকে জোর চাপ দিয়ে  এই চার মহিলাকে আবার পুরনো দলে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়। যদিও তৃনমুল নেতৃত্বের দাবি তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেই ফের স্বেচ্ছায় তৃনমুলে ফিরেছিল। তখন প্রশ্ন উঠেছিল তারা যদি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় ফিরতে চেয়েছিল তাহলে তাঁদের দণ্ডি কাটিয়ে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করানো হয়েছিল কেন। সে নিয়ে শাসক শিবির নিরুত্তর থাকতেই বেশি উৎসাহী ছিল।

সে সময়  বালুরঘাট কোর্ট মোড় থেকে তৃণমূল পার্টি অফিস পর্যন্ত প্রায় আধ কিলোমিটারের বেশী জনবহুল রাস্তা দিয়ে দণ্ডি কাটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। সেই ঘটনার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘আদিবাসী বিরোধী’ স্লোগান তুলে সমালোচনায় সরব হয়েছিল বিরোধীরা। দণ্ডিকাণ্ডের সেই শিউলিকেই পঞ্চায়েতে প্রার্থী করল তৃণমূল। তপনের গোফানগর পঞ্চায়েতের চকবলরাম এলাকা থেকে দাঁড়াচ্ছেন শিউলি। তাঁর বিপক্ষে বিজেপির প্রতীকে লড়ছেন সোনামণি মুর্মু এবং আরএসপির প্রার্থী সালোমি হেমব্রম।

 

তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর শিউলি বলেন, ওসব ঘটনা ভুলে গেছি। আমি এখন মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমার স্বামী ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে গোফানগরে তৃণমূলের প্রধান হয়েছিলেন। তৃণমূল এলাকার উন্নয়ন,  রাস্তাঘাট ও মানুষের কাজ করেছে। আমি এলাকার মানুষের উন্নয়ন করতে চাই।

বিজেপি যদিও শিউলির প্রার্থী হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছে। বিজেপি নেতা বাপি সরকার বলেন, ‘‘এটা জুতো মেরে গরু দান। আদিবাসী মহিলাদের যে ভাবে অপমান করা হয়েছিল প্রকাশ্য রাস্তায় দণ্ডি কাটিয়ে,  তা এই সমাজ কখনও ভুলে যাবে না এবং তাঁদের যথাযথ জবাব আগামী পঞ্চায়েত ভোটেই দিয়ে দেবে আদিবাসী সমাজ।’’ তবে শিউলি বিপুল ভোটে জিতবেন বলে আশাবাদী শাসকদল। দলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘‘কোনও প্রায়শ্চিত্ত নয়। এলাকায় আদিবাসী সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী এবং শিউলি মারডি অনেক পুরনো নেত্রী। সেই জন্যই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস অত্যন্ত শক্তিশালী এই এলাকায়। অনেক ভোটে জিতবেন শিউলি।’’

অন্যদিকে শিউলিদের ‘ঘর ওয়াপসি’র সময় তাঁদের দিয়ে দণ্ডি কাটানোর অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিল,  মহিলা জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী সেই প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের থাকলেও তাকে স্রেফ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ছেড়ে দেয়। (EVM new)

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর