ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১০ জুনঃ (Latest News) পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ কর্মী নেই রাজ্যে, তাও কেন নয় কেন্দ্রীয় বাহিনী? প্রশ্ন বিরোধীদের। রাজ্যে মোট পুলিশের সংখ্যা কম-বেশী ৭৮ হাজার। কলকাতা পুলিশের সংখ্যা কম-বেশি ৩০ হাজার। পঞ্চায়েতে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা কম-বেশী ৬১,৬৩৬। প্রতি কেন্দ্রে যদি একজন করেও রাজ্যের পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয় তাহলেও থানাগুলি ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কথা। তারপর তো আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, টহলদারি, তল্লাশি, স্ট্রং-রুম রক্ষা ইত্যাদির জন্যেও পুলিশ কর্মী দরকার। তাও কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট নয় ? প্রশ্ন বিরোধীদের।
এদিকে শুক্রবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট পাঁচ দফায় সম্পন্ন করার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী। একই দাবিতে জনস্বার্থ মামলা করেন বিজেপির আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তীও। দুপুরেই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। রাজ্যের তরফে মামলার শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ছিলেন জিষ্ণু সাহা।
শুনানির সময় কে কি বললেন ? দেখুন…
কল্যাণ ব্যানার্জি (রাজ্য সরকারের আইনজীবী): ‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। অতীতে দেখা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে হস্তক্ষেপ করেনি’।
শিবজ্ঞানম (প্রধান বিচারপতি): ‘আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনতে চাই। মামলায় একাধিক আবেদন করা হয়েছে। তা নিয়ে তাদের অবস্থান প্রথমে জানা দরকার’।
গুরুকৃষ্ণ কুমার (বিজেপির আইনজীবী): ‘আমাদের বেশ কয়েকটি আবেদন রয়েছে। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য মাত্র ৫ দিন সময় কেন ? এত তাড়াহুড়োর কী রয়েছে ? অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা কোনও বিশেষ অফিসারকে দিয়ে এই ভোটের উপর নজরদারি করা হোক। সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য মোতায়েন করা হোক কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোটগ্রহণ থেকে গণনা পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার করা উচিত। অনলাইনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক’।
জিষ্ণু সাহা( রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী): ‘আমরা সব বিষয়টিই নজরে রাখছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে’।
শিবজ্ঞানম (প্রধান বিচারপতি): ‘সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ে কী অবস্থান ? এখন তো বার অ্যাসোসিয়েশনও ক্যামেরার নজিরদারিতে। তা হলে এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে কেন সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেই কমিশনের ? প্রযুক্তির এত উন্নতি হয়েছে। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্যামেরার নজরদারি করা প্রয়োজন বলে মনে করি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব’।
শিবজ্ঞানম (প্রধান বিচারপতি): ‘মনোনয়নে এত কম সময় কেন? এত আসনে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। ফলে বিষয়টি তো কমিশনের চিন্তা করা প্রয়োজন। পঞ্চায়েতের মেয়াদ কবে শেষ হচ্ছে ?’
কল্যাণ ব্যানার্জি (রাজ্য সরকারের আইনজীবী): ‘অগস্টে মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তার পরে এক মাস সময় লাগে’।
শিবজ্ঞানম (প্রধান বিচারপতি): ‘পুরো প্রক্রিয়াটিতে তাড়াহুড়ো মনে হচ্ছে!’
কল্যাণ ব্যানার্জি (রাজ্য সরকারের আইনজীবী): ‘২০১৮ সালে কমিশনের সিদ্ধান্তের উপর কোনও হস্তক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। শুধু ফলঘোষণার উপর নির্দেশ ছিল’।
শিবজ্ঞানম (প্রধান বিচারপতি): ‘বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছি। মনোনয়ন নিয়ে কমিশনের অবস্থান কী’?
জিষ্ণু সাহা( রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ): ‘মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় কম বলা হচ্ছে, বাড়ানো যায় কি না তা জেনে এসে বলতে পারব’।
কৌস্তুভ বাগচী ( কংগ্রেসের আইনজীবী)ঃ ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি না। অনলাইনে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখা যায়। মুর্শিদাবাদের রানিনগর এলাকার ক্ষেত্রে উদাহরণ দিতে পারি এমন ঘটনার’।
কল্যাণ ব্যানার্জি (রাজ্য সরকারের আইনজীবী):’ ইলেকট্রনিক তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। অনলাইনে মনোনয়ন নিতে হবে বলে নিয়মে কোথাও নেই’।
শিবজ্ঞানম (প্রধান বিচারপতি): ‘অনলাইনে মনোনয়ন জমা নেওয়ায় কী অসুবিধা ? অনলাইন হলে তো সুবিধা। কেউ সশরীরে যেতে না পারলে তিনিও মনোনয়ন দিতে পারবেন। স্ক্রুটিনি কত সহজ হয়ে যাবে। প্রযুক্তিতে আপনাদের এত এলার্জি কেন ? নিয়ম আগে ছিল না বলে এখন হবে না, এটা তো কোনও কাজের কথা নয় ! এই হাই কোর্টেও তো অনেক কিছু আগে হয়নি। এখন হচ্ছে’।
গুরুকৃষ্ণ কুমার (বিজেপির আইনজীবী): ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা প্রকাশ করুক কমিশন। মনোনয়নে মাত্র ৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির দিন থেকে ন্যূনতম ১২ দিন সময় দেওয়া হোক’।
শিবজ্ঞানম (প্রধান বিচারপতি):’ আগামী শুনানিতে সব বিষয়েই বিবেচনা করা হবে। নির্বাচন কমিশন আগে রিপোর্ট জমা দিক’।
আদালতের পর্যবেক্ষণ: প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় খুবই কম। এত তাড়াহুড়ো কেন ? এটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত কমিশনের। ব্লক অফিস অর্থাৎ বিডিওর দফতর ছাড়াও অন্যত্র মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া যায় কি না দেখা হোক। এ নিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে কমিশনকে।সুষ্ঠু এবং শান্তিতে ভোটের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা উচিত। পুলিশ না কি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হবে তা রাজ্য সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাক। নির্বিঘ্নে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত’। (আগামী ১২ ই জুন সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি) (EVM News)