ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৭ ফেব্রুয়ারিঃ মিড ডে মিলের চাল থেকে বিপর্যয় পরবর্তী ত্রাণের ত্রিপল হয়ে শিক্ষকতার চাকরি। গত কয়েকবছরে একের পর এক সরকারি সম্পত্তি বিক্রি বা চুরির ঘটনায়, বারবার অভিযোগের আঙুল উঠেছে, রাজ্যের শাসকদলের নেতাকর্মী থেকে বিধায়ক, এমনকী মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। মুখরক্ষার তাগিদে বারবার প্রকাশ্য সভামঞ্চ থেকে, এ ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্কবার্তা দিতে বাধ্য হয়েছে, সরকার তথা শাসকদলের শীর্ষনেতৃত্ব। কিন্তু তারপরও কমছে না দুর্নীতির এই প্রবণতা। এবার কংসাবতী নদীর তীরের লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল, বাঁকুড়ার খাতরায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত মহাপাত্র ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি খাতরা ব্লকের গোড়াবাড়ি পঞ্চায়েতের বনকাটি মৌজা এলাকায় কংসাবতীর পাড়ে সরকারি ও ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে, সরকারি উদ্যোগে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে, আকাশমণি, সোনাঝুরি, বাবলা সহ একাধিক দুর্মূল্য গাছ লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারি নিয়মবিধির তোয়াক্কা না করে, সেই গাছগুলি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন, খাতরার তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুব্রত মহাপাত্র ও তাঁর অনুগামীরা। এমনকি এই অবৈধ কাজে প্রশাসনের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছেন এখানকার মানুষজন। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় নদী ভাঙনের আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন, স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই যাবতীয় অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির পাল্টা যুক্তি বিরোধীরা তাঁকে কালিমালিপ্ত করতেই এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি, দুর্নীতির ঘটনায় খাতড়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুব্রত মহাপাত্রের পাশেই দাঁড়িয়েছেন, বাঁকুড়া জেলাপরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু। তাঁর দাবি এই ঘটনার সঙ্গে দল বা ব্লক সভাপতির কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁদের জমিতে গাছগুলি রয়েছে, তাঁরা নিশ্চয়ই আলোচনা করে, গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এমন হাতেগরম অভিযোগ পেয়ে, বিষয়টি হাতছাড়া করতে চায়নি, বাঁকুড়ার বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির সাংগঠনিক জেলাসভাপতি সুনিরুদ্ধ মণ্ডলের কটাক্ষ, সামনে যেহেতু পঞ্চায়েত নির্বাচন, তাই সেই নির্বাচনের খরচ তুলতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের গাছ কেটে বিক্রি করছে শাসকদলের স্থানীয় নেতারা। এর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই আন্দোলনে নামার হুশিয়ারিও দিয়েছেন, জেলা বিজেপির ওই নেতা।
যদিও রাজ্য বনদফতরের খাতড়ার ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার সীতারাম দাস স্পষ্ট জানিয়েছেন, কংসাবতী নদীর তীরে থাকা সরকারি প্রকল্পের ওই গাছগুলি কাটার বিষয়ে, বনদফতরের কাছে কেউ কোনও অনুমতি নেয়নি। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে, তিনি স্থানীয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকায় যাবেন বলেও জানিয়েছেন, রেঞ্জ অফিসার সীতারাম দাস।
রাজ্যে এধরনের একের পর এক চুরি আর দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে আশায়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমনিতেই অস্বস্তিতে রয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব। সেই অস্বস্তিতে সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করার এই ঘটনা, নতুন করে কোনও কাটার খোঁচা দিতে পারে কিনা, এখন সেটাই দেখার।