ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১৭ ফ্রেব্রুয়ারিঃ গাছের ডালেই কাটছে জীবন। গাছই তাঁর ড্রইংরুম থেকে ডাইনিংরুম, এমনকী বেডরুমও বটে। আর এবার সেই গাছের গায়েই স্টাডিরুম বানিয়ে ফেললেন, ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদার জয়পুরগ্রামের যুবক, বরুণ দাস। ছোটো থেকেই গাছপালার মধ্যে বড় হয়ে উঠেছেন বরুণ। আর সেই সূত্রেই গাছ যেন তাঁর ভালোবাসার সঙ্গী হয়ে গেছে। এবার গাছের ডালে আস্ত একটা পড়ার ঘর বানিয়ে, সেই ভালোবাসাকেই যেন প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিলেন, শিলদা কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করা এই যুবক।
কিন্তু কেন আর কীভাবে এমন অভিনব ঘর তৈরির ভাবনা এল? বরুণের নিজের কথায় ছোটবেলায় আর পাঁচটা শিশুর মতোই কার্টুন দেখতেন। বিশেষ করে, ছোটা ভীমের তো ভীষণ ভক্ত ছিলেন বরুণ। আর ছোটা ভীমের সঙ্গী জগ্গুর সেই গাছের ওপর বাড়ি দেখেই, ছোট্ট বরুণের সখ হয়েছিল, বড় হয়ে সেও এমন একটা গাছ-বাড়ি বানাবে। আর সেই সখ পূরণের সুযোগ এনে দিল করোনার হাত ধরে আসা লকডাউন। ২০২০ সালে লকডাউন ঘোষণার পর, গোটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যখন অনলাইন ক্লাস অনিবার্য হয়ে উঠেছে, তখন সমস্যায় পড়ে ছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়ারা। বরুণেরও সেই একই সমস্যা হচ্ছিল। সমস্যার নাম অনিয়মিত টাওয়ার নেটওয়ার্ক। আর তখনই একদিন গাছে উঠে বরুণ দেখলেন, টাওয়ার সংযোগ পেতে খুব সমস্যা হচ্ছে না। যেমন দেখা, তেমন কাজ। ৮০০ বর্গফুটের ছোট্ট বাড়িটা প্রায় ৭০ টি গাছ দিয়ে ঘেরা। আর সেই গাছের ভিড়েই আছে শক্তপোক্ত একটা নিমগাছ। সেই গাছের গায়েই বরুণ বানিয়ে ফেললেন, একটা পড়ার ঘর। শুধু নিজের জন্য নয়। লকডাউনের সময় থেকে গ্রামের ছাত্রছাত্রী আর নিজের সহপাঠীদের কাছেও, বরুণের এই গাছ-ঘর হয়ে উঠেছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা।
শিলদা কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করে, আপাতত বিএড পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বরুণ। এই গাছ-ঘরে বসেই। আর পড়ার খরচ চালাতে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে তেলেভাজা বিক্রি করছেন। কে যেন বলেছিল ইচ্ছে থাকলে উপায় হবেই?