আদিত্য L1 সূর্যের পথে
কী আছে এর শরীরে?কবে পৌঁছাবে গন্তব্যে?
চন্দ্রযান ৩ মিশন সফল হওয়ার পর ভারতের নাম বিশ্বের সমস্ত দেশের আগে উঠে এসেছে । ভারতই প্রথম দেশ যারা কিনা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এরপর ২রা সেপ্টেম্বর সূর্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে ভারতের সোলার মিশন আদিত্য L1। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং জার্মানি ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশ সূর্যের উদ্দেশ্যে অভিযানে সফল হয়নি। এবার এদের নামের সাথে ভারতের নাম যুক্ত হতে চলেছে। এই শোলার মিসন ইসরোর ৫ম প্রজেক্ট।
আদিত্য L1 সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝের এমন একটি জায়গায় অবস্থান করবে যেখানে সূর্য তাকে নিজের দিকে টানতে পারবে না এবং পৃথিবীও তাকে নিজের দিকে টানতে পারবে না । ফলে বিজ্ঞানীরা সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝের এই হ্যালো কক্ষপথের ওপর অবস্থান করাবে আদিত্য L1 কে ।এই কক্ষপথ ধরেই সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকবে আদিত্য L1। সূর্যের স্বভাব, সৌর ঝড়, সূর্যের আলাদা আলাদা স্তরের পরীক্ষা করবে সে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার কিন্তু আদিত্য L1 মাত্র ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের এক শতাংশ দূরে অবস্থান করতে করবে আদিত্য L1। এখান থেকেই সূর্যের আবহাওয়ার উপর নজরদারি চালাবে আদিত্য। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী হরিকোটা স্পেস সেন্টার থেকে ২ রা সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা৫০ এ রওনা দিয়েছে আদিত্য L1।
কতদিন সময় লাগবে গন্তব্যে পৌঁছতে?
২রা সেপ্টেম্বর থেকে চার মাস অর্থাৎ ১২০ দিন সময় লাগছে আদিত্য L1কে তার নিজের গন্তব্যে পৌঁছাতে। পৃথিবী থেকে যদি একটি সোজা রেখা, সূর্যের দিকে টানা হয় তাহলে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হ্যালো কক্ষপথের Lagrange পয়েন্ট L1 এ অবস্থান করবে আদিত্য এবং সেখান থেকে টানা পাঁচ বছর গবেষণা করবে সূর্যের বিষয়।
কি আছে আদিত্যL1 এর শরীরে?
আদিত্য L1 এ সাতটি পেলোর্ড লাগানো হয়েছে। এই সাতটি পিলোর্ড সূর্যের করোনা , সেখান থেকে নির্গত রেডিয়েশন, সৌর ঝড় এবং করোনাল মাস্ক ইজেকশন এর গবেষণা করবে। এছাড়া আদিত্য L1 সূর্যের ফটোস্ফিয়ার এবং ক্রোমোস্ফিয়ার থেকে নির্গত অতিগুনি রশ্মি অর্থাৎ ইউভি রে এর ছবি তুলবে। সূর্যের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে করোনা, ফটোস্ফিয়ার এবং ক্রমোস্ফিয়ার স্তরের গবেষণা করবে। এই গবেষণা থেকে মানুষ সূর্যের তাপমাত্রা এবং সৌর ঝড় সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে পারবে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন সৌর ঝড় যদি খুবই শক্তিশালী হয় তবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অবস্থিত যে স্যাটেলাইট গুলি আছে পরবর্তী সময় সেই স্যাটেলাইট গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যার ফলে পৃথিবীতে মোবাইল পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা তৈরি করতে পারে, জিপিএস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এরোপ্লেন চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই ইসরো নিজের উদ্যোগে সৌর ঝড়ের এই প্রকৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে যাতে পৃথিবীতে এই ধরনের সমস্যা না আসে বা আসলেও তার আগাম সর্তকতা অবলম্বন করা যায়। ভারতের চন্দ্রযান ৩ পৃথিবী থেকে চাঁদের মধ্যে ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিল কিন্তু সোলার মিশনে আদিত্য L1 ১৫ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে চলেছে। সোলার মিশন হলো পঞ্চম মিশন যেখানে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বাইরে বেরিয়ে Lagrange 1পয়েন্টএ অবস্থান করবে। এর আগে চন্দ্রযান ১, চন্দ্রজান ২, চন্দ্রযান ৩, ভারতের মঙ্গল যান পৃথিবীর কক্ষপথে বাইরে গিয়েছিল।
আমাদের সৌরজগতে সূর্য এমনই একটি তারা যে পৃথিবীর সবথেকে কাছের।
সূর্যের আকার পৃথিবীর আকারের থেকে এতটাই বড় যে সূর্যের ভেতর পৃথিবীর মতো ১৩ লক্ষ গ্রহ অবস্থান করতে পারবে। সূর্যের ব্যাস ১৩ লক্ষ ৭৫২ হাজার কিলোমিটার ।
পৃথিবীর সৌরজগতে সূর্যই প্রধান। এতদিন বিজ্ঞানীরা সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতেন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যা পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে এবং পৃথিবী থেকে মানুষ তার গবেষণা চালাচ্ছে। এবার পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হ্যালো অরবিটের lagrange L1পয়েন্ট থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা করা সহজ হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।