ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২০ ফেব্রুয়ারিঃ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এক কবিতায় বলেছেন, “হে কলম! তুমি ইতিহাস গিয়েছ লিখে, লিখে লিখে শুধু ছড়িয়ে দিয়েছ চতুর্দিকে। আর দৃষ্টিহীন এক বৃদ্ধ সদ্যসমাপ্ত কলকাতা বইমেলায় তৈরি করে ফেললেন এক ইতিহাস, বা বলা ভালো, কলম দিয়ে লিখে ফেললেন ইতিহাসের এক অধ্যায়। তাঁর হাতে রয়েছে এমন এক কলম যা দিয়ে লেখা যায় আবার কালি শেষ হয়ে গেলে বেশিরভাগটাই মাটিতে মিশে যায়। ঠিকঠাক জল আলো বাতাস পেলে সেখান থেকেই তৈরি হয় চারা গাছ। সেই চারা গাছ একদিন বড় হয় একটু যত্নআত্তি পেলে ফুল ফোটে আর ফলের গাছ হলে ফলও দেয়। না এটা কোনও জাদুকরের কথা বলছি না, এই অবাক করা কলম বিক্রি করেন কলকাতার টালিগঞ্জের কালীতলার ষাটোর্ধ সুমল খাঁ। এই কলম পরিবেশবান্ধব এবং কাগজের তৈরি।
কলকাতার এক যুবক শুভজিৎ সাহা কয়েকদিন আগে পরিবেশবান্ধব একটি সংস্থা তৈরি করেন। লক্ষ্য ছিল কাগজ দিয়ে কলম তৈরি করার। বানিয়েওছেন তিনি। কিন্তু এই কলমের মধ্যে রয়েছে একটি বৈশিষ্ট্য। এই কাগজের কলমের ঠিক শেষে রয়েছে একটি করে গাছের বীজ। লেখার ক্ষমতা শেষ হয়ে গেলেও কলমের কাজ শেষ হবে না। শুভিজিতের সংস্থার তৈরি সেই কলমই বিক্রি করেন সুমল।
আসল নাম সুমন। মাত্র চার বছর বয়সে কাল বসন্তের কারণে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছিলেন। বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলে পড়ার সময় নাম বদলে হয় সুমল। পৈতৃক নাম হারানোর কষ্ট এখনও রয়েছে সুমল বাবুর। । উপার্জনের জন্য এই কাগজের কলম বিক্রি করার পথ বেছে নেন তিনি। এখন এটাই সুমল বাবুর জীবিকা। ট্রেনে হকারি করেন। অনেকেই এই কলম নেন। এই পরিবেশবান্ধব কলম ভালোই বিক্রি হয়। কেউ কেউ একটা দুটো কেনেন আবার অনেকে বেশী করে অর্ডার দেন তাঁকে। কলম বিক্রি করে আয় যা হয় তাতে তাঁর মোটামুটি চলে যায়। সুমল বাবু জানান, তাঁর কাছে দু’রকমের কলম থাকে। একটি সাধারণ অন্যটি ক্যাপসুল। সধারণ পেনের মধ্যে যে কোনও একটি গাছের বীজ থাকে। যার মূল্য ৫ টাকা। আর ক্যাপসুলের মধ্যে থাকে তিন চারটি গাছের বীজ। লঙ্কা, ঢেঁড়শ, বেগুন, টম্যাটো ইত্যাদি নানা ফসলের বীজ। যার মূল্য ১০ টাকা। তবে এই বীজের ক্ষেত্রে কোনও কোনও সময় জিনিয়া, দোপাটি,নয়নতারা ফুলের বীজও থাকে। পেনের বাইরে থেকে বোঝা যাবে না কি ফুলের বা ফলের বীজ দেওয়া রয়েছে। তবে যে ফুল বা ফল যে ঋতুর সেই সময়েরই বীজ দেওয়া হয়।