ইভিএম নিউজ ব্যুরোঃ বাবা দিনমজুর। মা টুকিটাকি টিউশনি করেন। ফলে মনেপ্রাণে যথেষ্ট প্রগতিশীল। কিন্তু তারপরও সেই দরিদ্র পরিবারের মেয়েটির ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন দিনের পর দিন ধাক্কা খেয়ে এসেছে। কারণ পিছিয়ে পড়া সমাজে প্রতিবেশীদের টিকাটিপ্পনি। ‘গরিবের মেয়ে হয়ে আবার ফুটবল খেলার সাধ কেন?’ এমনটাই বলতেন প্রতিবেশীরা। অবশ্য সেই বাঁকা নজরকে পাত্তা না দিয়েই, গরিবের মেয়ে সোনালী সরেন হয়ে উঠেছেন, অনূর্ধ্ব ২০ ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সেটা সম্ভব হয়েছে দিনমজুর বাবা আর সাহসী মায়ের উৎসাহে।
পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার ধাত্রীধাম পঞ্চায়েতের বাধাগাছি গ্রামের দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে সোনালী, ছোটবেলা থেকেই একটু মুখচোরা প্রকৃতির। কিন্তু হলে কী হবে। বালিকা বয়স থেকেই বল পায়ে মাঠে দাঁড়ালে, এই মেয়েটিই হয়ে উঠত দুর্দান্ত। আর তার ভেতরের সেই রূপটাই এবার টের পেল, প্রতিবেশী ভুটানের জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রতিপক্ষরা। সম্প্রতি বাংলাদেশে ভুটানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকস্তরের একটি ফুটবল ম্যাচে, দেশের জার্সি পড়ে মাঠে নেমেছিলেন সোনালী সরেন। সেই ম্যাচে বল নিয়ে সোনালীর তীব্র গতিতে দৌড়, প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে শরীরের দোলায় কাটিয়ে নেওয়া অথবা কড়া ট্যাকল, রীতিমতো নজর কাটলো দর্শকদের।
অবশ্য এই প্রথম নয়। বরং গত কয়েক বছর ধরেই নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ছড়াতে ছড়াতে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসছিলেন। পরপর তিনবছর রাজ্যের সেরা মহিলা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। আর সেই সুবাদেই এসেছিল জোড়া সুযোগ। একটা ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দলে। আরেকটা সুযোগ এসেছিল ইটালির নেপলসে আধুনিক আর উন্নতমানের প্রশিক্ষণ নেওয়ার।
গতবছরই অনূর্ধ্ব ১৭ জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে ৯ গোল করে সারা ফেলে দিয়েছিলেন। এমন একের পর এক সাফল্যের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই, পাড়াপ্রতিবেশীদের টিকাটিপ্পনি বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?