ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৭ মার্চঃ এক রাজবাড়ী। ৪০০ বছরের পুরনো। এখন পরিত্যক্ত, জীর্ণ, ভগ্নদশা। কিন্তু এককালে এই জীর্ণ বাড়িই ছিল চমৎকার স্থাপত্যের নিদর্শন, আর ছিল জমজমাট। সন্ধ্যে হলেই জ্বলতো ঝাড়বাতি, রাতে বসতো মেহফিল। রাজ পরিবার থাকতেন যে সেখানেই।
সেই সুবিশাল রাজবাড়ী আজ ভুতের আস্তানা বলেই পরিচিত গ্রামবাসীদের কাছে। এই রাজবাড়ীর ইতিহাস চমকপ্রদ।
মূল রাজবাড়ীর সঙ্গে আরও তিনটি মহল যুক্ত ছিল সুড়ঙ্গ দিয়ে। তার একটি সুড়ঙ্গ পৌঁছোতো বেশ খানিকটা দূরের একটি বাড়িতে। সেখানে প্রতি বছর ধুমধাম করে হতো রথযাত্রার আয়োজন। পর্দানশীন রানীরা প্রকাশ্য দিবালোকে তো আর সবার সামনে দিয়ে হেঁটে সেখানে যেতে পারতেন না, তাই তারা রথযাত্রা দেখতে ওই বাড়িতে হাজির হতেন ওই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে। তারপর রাজবাড়ীতে ফিরেও আসতেন ওই একই পথ ধরে।
কিন্তু বাকি সুড়ঙ্গ গুলোর রয়েছে ভয়ংকর, বেদনাদায়ক ইতিহাস। একটি সুড়ঙ্গ গিয়ে পৌঁছেছে একটি মহলে। বেয়াদব প্রজাদের আটক করে রাখা হতো সেখানে। মহিলাদের আটকে রাখার জন্যও ছিল ব্যবস্থা। বেয়াদবদের সিধে করার জন্য, অথবা কর আদায়ের জন্য সেখানেই তাদের ওপর চলত অকথ্য অত্যাচার। সেসব দাওয়াইয়ে কাজ না হলে হত্যা করা হতো প্রতিবাদীদের। পুঁতে দেওয়া হতো লাশ।
আরও একটি সুড়ঙ্গের ইতিহাসও করুণ। ওই রাজবাড়ীর রাজারা বর্গী পুষতেন। সেই বর্গীদের দিয়ে ডাকাতি করাতেন, আর লুটের মাল জমা হতো মাটির নিচের আরেকটি মহলে। ওপরে মাঠ, আর নিচে লুঠের সোনা দানা বোঝাই করা এক মহল। রাজবাড়ী থেকে একটি সুড়ঙ্গ সোজা পৌঁছে গেছে সেখানে। মাঠের উপর রয়েছে একটি ঘর। স্থানীয়রা বলেন ওই ঘরটি ছিল পাহারা ঘর। ওই মাঠের একটি জায়গায় একটি দরজা ছিল। সেই দরজা দিয়ে সটান ঢুকে পড়া যেত সেই পাতালঘরে। লুটের মাল যাতে কেউ চুরি করতে না পারে সেজন্যই ছিল ওই কড়া পাহারার ব্যবস্থা।
এককালের জাঁকজমকপূর্ণ সেই রাজবাড়ি এখন ঝোপঝাড়ে ভর্তি। রাজাদের বংশধররা থাকেন কাছেই অন্য এক বাড়িতে। নতুন রাজবাড়ী। আর পুরনো, আসল রাজবাড়ী এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে এককালের জৌলুস আর কলঙ্ক একই সঙ্গে বুকে নিয়ে।
এখন লোকে সেখানে যেতে চায় না। ওটা নাকি ভুতুড়ে বাড়ি। বাড়ির ভেতর থেকে রাত্রিবেলা ভেসে আসে অদ্ভুতুড়ে সব আওয়াজ। অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেওয়া শব্দ। শোনা যায় পায়ের নুপুরের আওয়াজ, মহিলার কান্নার আওয়াজ, এমনকি কেউ যেন ভেতর থেকে সর্বশক্তি দিয়ে দরজায় ধাক্কা দেয় মাঝে মাঝে। আর ভেসে আসে ‘দরজা খোলো, দরজা খোলো’ বলে আর্ত চিৎকার। সেই চিৎকার ছড়িয়ে যায় গোটা রাজবাড়ী জুড়ে। ধাক্কা খায় দরজায় দরজায়, রাজবাড়ীর জীর্ণ দেওয়ালে। অসহায় সেই আর্তি গুমরে গুমরে ভেসে বেড়ায় রাজবাড়ীর অভিশপ্ত হওয়ায়।