রাহুল কর্মকার, সিমলাপালঃ  একদিকে নিয়োগ দুর্নীতির কাঁটা। অন্যদিকে ‘আবাস’ কেলেঙ্কারির খোঁচা। অভিযোগের এই জোড়াফলায় বিদ্ধ রাজ্যের শাসকশিবিরে, ফের নতুন অশান্তি। না বিরোধী দলের কোনও ষড়যন্ত্র নয়। এবার জেলায় জেলায় দলেরই একশ্রেণীর মাঝের আর নীচের সারির নেতার দুর্নীতির অভিযোগে, প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানাতে শুরু করেছেন  দলের নীচুতলার কর্মীরা। কোথাও কোথাও সেই ক্ষোভের জেরে রীতিমতো হিংসাত্মক সংঘর্ষ আর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যের নানা জেলায় তৈরি হওয়া এই একের পর এক ঘটনার প্রভাব দলে ভোট ব্যাঙ্কেও পড়বে কিনা, আর পড়লেও কীভাবে তা সামাল দেওয়া হবে, আপাতত সেই চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে, শাসকদলের একাধিক জেলার শীর্ষনেতাদের মহলে। আর সেই অশান্তির আগুন আরও খানিকটা উসকে দিল, বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকের মাচাতোড়া অঞ্চলে রবিবারের একটি ঘটনা। রাজ্যের শাসকদলের মাচাতোড়ার অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় স্বজনপোষণ, আর দলীয় তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে, তৃণমূলের অঞ্চল অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে তালা লাগিয়ে দিলেন, নীচুতলার স্থানীয় কর্মীরা।
স্থানীয়সূত্রে দাবি, সিমলাপাল ব্লকের মাচাতোড় এলাকায় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির নানা অভিযোগ আর দুর্নীতির কথা দলের জেলা নেতৃত্বকে জানানোর পাশাপাশি, তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি করেছিলেন স্থানীয় একদল তৃণমূলকর্মী। কিন্তু বাঁকুড়ার জেলানেতৃত্ব সেই অভিযোগকে পাত্তা না দিয়ে, ফের শিশির শতপথিকেই অঞ্চল সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত করে বলে, ওই প্রতিবাদী তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ। আর এরপরেই, এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়। দলীয় তহবিলের হিসাব চাইতে রবিবার মাচাতোড়ায় তৃণমূলের আঞ্চলিক কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন, ওই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু অঞ্চল সভাপতি শিশির শতপথি আগেভাগেই সেই খবর পেয়ে, এদিন অঞ্চল অফিসে যাননি বলে, সিমলাপাল ব্লক তৃণমূলের অন্দরের একটি সূত্রে জানা গেছে। আর এরপরেই অঞ্চল অফিসে যাওয়ার তৃণমূল কর্মীরা কবে ফেটে পড়েন। অঞ্চল অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করার পাশাপাশি, অফিসের বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়েও দেওয়া হয়।
যদিও এদিনের এই ঘটনা নিয়ে অভিযুক্ত অঞ্চল সভাপতির প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁকে ফোন করা হলেও, সেই ফোন তিনি ধরেননি। তবে ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অঞ্চল সভাপতির পাশেই দাঁড়িয়েছেন, তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি। তাঁর পাল্টা দাবি, “দলের পতাকা নিয়ে এদিন যাঁরা তৃণমূলের অঞ্চল অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছেন, তাঁরা আসলে বিজেপি সমর্থিত স্থানীয় কিছু ঠিকাদার। অঞ্চল সভাপতি এদের কিছু কাজের বিরোধিতা করেছেন বলেই, এরা পরিকল্পনামাফিক এই ঘটনা ঘটিয়েছে”। অন্যদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নিলয় শাসকদলকে কোণঠাসা করতে, এহেন ঘটনাকে হাতিয়ার করার সুযোগ ছাড়তে রাজি হয়নি বিজেপিও। স্থানীয় সাংসদ সৌমিত্র খাঁ কটাক্ষের সুরে জানিয়েছেন, “শুধু বাঁকুড়ার শালতোড়া নয়, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রধানত শাসকদলের নেতাদের দুর্নীতির কারণেই, গোটা রাজ্যের বুথে বুথে তৃণমূল বনাম তৃণমূলের লড়াই হবে। আর সেই লড়াইয়ের মাঝে বাঁকুড়া জেলা তথা রাজ্যবাসীকে উন্নয়নের সঠিক দিশা দেখাবে, একমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টি”।
প্রসঙ্গত, গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরবঙ্গের এক জনসভা থেকে, আগামী ছ’ মাসের মধ্যে নতুন তৃণমূলকে দেখতে পাবেন বলে রাজ্যবাসীকে বার্তা দিয়েছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যে আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যেভাবে জেলায় জেলায় দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই নানা দুর্নীতির অভিযোগে, নীচুতলার কর্মীরা প্রকাশ্যে সরব হচ্ছেন, তাতে এটাই অভিষেক বর্ণিত সেই “নতুন তৃণমূল” কিনা,  আপাতত তা নিয়েই বিরোধীশিবিরে শুরু হয়েছে, নিত্যনতুন কটুকাটব্য।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর