ইভিএম নিউজ ব্যুরোঃ ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক’। আর সেটা জেনেশুনেও দম ভরে সিগারেটে সুখটান দিয়ে চলেছেন কোটি কোটি মানুষ। তারপর গলগল করে ধোঁয়া উগড়ে নিজের তো বটেই, পরিবেশ আর আশপাশের লোকজনের শরীরেও ভরে দিচ্ছেন, দলা দলা বিষবাষ্প। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত, জেনে বা না-জেনে এভাবেই কত না রোগের গ্রাসে চলে যাচ্ছেন, কত অসংখ্য মানুষ। তারপরেও ধূমপায়ীদের এই মেজাজি বিলাস দেখে মনে পড়ে, রবিঠাকুরের সেই গানের লাইন, “আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান”।
এহেন জ্ঞানপাপীদের অগ্নিবিলাসে রাশ টানতেই বাজারে এসেছিল ই-সিগারেট। বিশেষজ্ঞদের দাবি ছিল, সিগারেটের ক্ষতিকারক নিকোটিনে থেকে মানুষকে বাঁচাতে, এই ই-সিগারেট হয়ে উঠবে, তুলনাহীন।
কিন্তু কোথায় কী! সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেল, বিশেষজ্ঞদের সেই দাবির ঠিক উল্টোটাই ঘটেছে বাস্তবে। ক্ষতি আটকানো তো দূরের কথা, উল্টে ধূমপায়ীদের ক্ষতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, এই ই-সিগারেট।
দ্য জর্জ ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের গবেষকদের সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারিভাবে ভারতে এই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হলেও, দেশের বিভিন্ন জায়গায় রমরমিয়ে চলছে এর ব্যবহার। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই এই সিগারেট খাওয়াথ প্রবণতা বেশি বলে জানিয়েছে, দ্য জর্জ ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের ওই সমীক্ষার রিপোর্ট।
কিন্তু কেন এই ই-সিগারেটকে আরও বেশি ক্ষতিকারকের তকমা দেওয়া হচ্ছে?
চিকিৎসকদের একাংশের ব্যাখ্যা, অভিনব এই ই-সিগারেটের তরল মিশ্রণে রয়েছে প্রপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথলিন গ্লাইসল, কৃত্রিম গন্ধ এবং নিকোটিন। ফলে গরম হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই তার থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বেরোতে শুরু করে। আর তার প্রতিক্রিয়ায় বমি-বমি ভাব, কাশি হামেসাই দেখা দিচ্ছে।
তবে ই-সিগারেট নিয়ে চিকিৎসকদের মাথাব্যাথার আরও বড় কারণ হল, এর নিকোটিনের পরিমাণ। সেই পরিমাণ এতটাই বেশি যে, সিগারেট ছাড়তে চেয়ে যাঁরা এটি ব্যবহার করছেন, তাঁরা আরও বেশি নেশাসক্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ ২০১৯ সালেই এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কে না জানে, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের গোপন আগ্রহ বেড়ে যাওয়াটাই এদেশের পরিচিত একটি সামাজিক চরিত্র। অতএব ভারতের বাজারে ই-সিগারেটের গোপন চাহিদা আর জোগান দিব্যি চলছে।