সন্ত্রাসবাদী

ব্যুরো নিউজ, ১০ নভেম্বর: সন্ত্রাসবাদী খুন। পিছনে কারা?

বিদেশের মাটিতেই ভারতের সমস্ত শত্রুরা একের পর এক নিকেশ হয়ে যাচ্ছে। খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী নিজ্জর থেকে শুরু করে লস্করি কমান্ডার সহিদ লতিফ সহ আরও অনেক সন্ত্রাসবাদী বিদেশের মাটিতে আততায়ীদের হাতে খুন হয়ে যাচ্ছে। ২৩ জুন ২০২১ এ আত্মঘাতী বোমা নিয়ে একটি গাড়ি, পুলিশ চেক পয়েন্ট ভেঙ্গে লস্করি তৈবার প্রধান, হাফিজ সহিদের বাড়ির সামনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। এই বিস্ফোরণে ৪ জন মারা যায়। এই বিস্ফোরণটি ঘটেছিল পূর্ব পাকিস্তানের লাহোর শহরে। বিস্ফোরণটি যখন ঘটে তখন ২০০৮ এর মুম্বাই বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রী হাফিজ সইদ বাড়িতে ছিল না। পরে পাকিস্তান এই বিস্ফোরণের জন্যে ভারতকে দায়ী করে। ২০২২ এর ডিসেম্বরে ইসলামাবাদে তাঁদের তৎকালীন গৃহমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ দাবি করেন, যে,  তাঁদের কাছে ভারত এই বিস্ফোরণের জন্য অর্থ সহায়তা করছে এইরকম অনেক প্রমান আছে। ভারতের বিদেশ দফতর সেই সময় এই ব্যাপারে কোন উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।

প্রসঙ্গত, সইদ ২০১৯ এ পাকিস্তানে আটক হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য সন্ত্রাসমূলক কাজে অর্থ সাহাজ্যের অভিযোগ ওঠে। সইদের এখন ৩১ বছরের জন্য জেল হয়েছে। সইদ অনেকবার ভাগ্যের জোরে বেচে গেলেও এ বছরের মে মাসে সইদের ডান হাত জামাত-উদ-দাওয়ার নেতা, ২৬/১১ এর মূল পাণ্ডা আব্দুল সালাম ভুট্টাভি জেলের মধ্যে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। জেল কত্রিপক্ষ বলেন হৃদরোগে তিনি মারা গেছেন।

‘হেনরি বাড়ি ফিরে এসেছে’ পোস্ট জয়ের

অন্যদিকে কানাডায় বসে থাকা ভারতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোরসের প্রধান ৪৫ বছর বয়সি হারদীপ সিং নিজ্জরকে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ক্যানাডিয়ান প্রভিন্সে সারি গুরদ্বারার সামনে অপরিচিত কিছু বন্দুকধারি গুলি করে হত্যা করে দেয়।  এই বছরের জুন মাসে যার মাথার দাম ভারত সরকার ১০ লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছে। ২০১৬ সালে ইন্টারপোল নিজ্জরের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারী করেছিল। কানাডার মাটিতে খালিস্তানিদের ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়ে ভারত বার বার কানাডার সমালোচনা করেছে। কানাডা ১৯৮৪ তে ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার দিনটিকে কানাডার মাটিতে তাঁরা গৌরবময় দিন বলে যেইভাবে পালন করেন তাঁর তীব্র সমালোচনা ভারত বার বার করে চলেছে। নিজ্জরের খুন নিয়ে ভারত ও কানাডার বৈদেশিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে।

এরপর এবছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের শিয়ালকোট জেলায় একটি মসজিদের সামনে জাইসি মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজাহারের অন্যতম দুই সঙ্গি ৫৩ বছর বয়সী সইদ লতিফ ও তাঁর ভাই হারিস হাসিমকে তিন জন আততায়ি মোটর সাইকেলে করে এসে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়। এই বছরের সেপ্টেম্বরে লস্করি তৈবার আর এক উচ্চপদস্থ কমান্ডার POK রাওয়ালকোটে আল কুদ্দুস মসজিদের সামনে রিয়াজ আহমেদকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে হত্যা করে। এই রিয়াজ আহমেদ জম্মু কাশ্মির থেকে রাজউরি জেলায় যে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয় যেখানে ৭ জন সাধারন নাগরিকের মৃত্যু হয় ও এক ডজনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। এই বছরের সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে মৌলানা জিয়াউল রহমান, করাচীর গুলিস্তান- ই- জাউহরে বিকেল বেলায় ঘুরে বেরাচ্ছিলেন। তাকে অপরিচিত কিছু লোক মোটর সাইকেলে করে এসে গুলি করে হত্যা করে। জিয়াউল রহমান ছিলেন লস্করের একজন সক্রিও সদস্য। সরকারি খাতায় যার নাম ছিল জামিয়া আবুবকর। পকিস্তান পুলিশ এই খুনের পিছনে দুই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াইয়ের কারন হিসাবে মনে করেছে। রহমানের মৃত্যুর পর করাচীতে একের পর এক মুসলিম ধর্মগুরুরা খুন হয়ে যায়, যাদের বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ ছিল মুসলিম যুব সমাজকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত করা ও তাঁদের ভারতবর্ষে প্রেরন করা।

 

এরপর মে মাসে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রভিন্সের  লাহোরে খালিস্তানি উগ্রপন্থি পরমজিত সিং পাঞ্জ্বারকে দুজন অপরিচিত লোক গুলি করে মেরে দেয়। ৬৩ বছর বয়সি পাঞ্জ্বার ভারতে নিষিদ্ধ খালিস্তানি কমান্ডো ফরসে [পরমজিত সিং পাঞ্জ্বার গ্রুপ] এর মাথা ছিল। এর বিরুদ্ধে ভারতে ড্রাগ ও অস্ত্র পাচারের অভিযোগ ছিল। ভারত ২০২০ সালে UAPA Act অনুযায়ী একে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে। পরমজিত সিং পাঞ্জ্বার লাহোরে বসে তাঁর এই সন্ত্রাসবাদীমুলক কাজ চালাতেন। পাঞ্জ্বার  ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমুলক ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেডিও পাকিস্তানের মাধ্যমে প্রচার করতেন।

ভারতে Indian Airlines এর Flight IC- 814 কে highjack করেছিলো যারা তাঁদের মধ্যে অন্যতম মিস্ত্রি জাউহর ইব্রাহিম   এইবছরের মার্চ মাসে করাচীতে খুন হয়ে যায়। করাচীর আকবর কলোনিতেই দুজন অপরিচিত লোক এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এই  জাউহর, আকবর কলোনিতেই জাহির আকুন্দ নামে ফেক পরিচয়ে ‘Crescent Furniture’ এর দোকান চালাতেন। আক্রমকারিরা মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট পরা ছিল। এই ইব্রাহিম ১৯৯৯ সালের ২৪ সে ডিসেম্বর নেপালের কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিগামি প্লেনকে highjack করার পর রুপিন কাটিয়াল বলে এক ভারতিও যাত্রীকে ছুরি মেরেছিল। এই প্লেন highjack এর অন্যতম mastermind জয়সি মহম্মদের top leader ইউসুফ আজাহান ওরফে মহম্মদ সেলিম ২০১৯ এর  ফেব্রুয়ারিতে বালাকোটে IAF এর বায়ু সেনার আক্রমনে মারা যায়।

পাকিস্তানি উগ্রপন্থিদের পাকিস্তানের মাটিতে এইভাবে খুন হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের Intelligence Agency ISI এর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অসমর্থিত সুত্রে খবর, যে পাকিস্তানের মধ্যেই এই সন্ত্রাসবাদী দলগুলো পরস্পরের মধ্যে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পরেছে। কোন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর পাকিস্তানের মাটিতে বেশি ক্ষমতা থাকবে এই নিয়ে লড়াইয়ের ফলে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হচ্ছে। যদিও পাকিস্তান কোন প্রমান ছারাই ভারতকে এর জন্যে দায়ী করেছে। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর