ব্যুরো নিউজ, ৭ নভেম্বর: শাঁখারির থেকে শাঁখা পরেছিলেন স্বয়ং মা! এখনও মশাল জ্বেলে পুজো হয় দেবীর
প্রাচীন রীতি মেনে এখনো মশাল জ্বালিয়ে পুজো হয় মানিকোড়া কালীর। ডাকাতদের হাতে পূজিতা দেবী এখন মানিকোড়া কালী নামে পরিচিত।
এলাকার মানুষের কাছে শোনা যায় ডাকাতদের দল নাকি এই কালী মায়ের পুজো দিতে আসাতো। লোকমুখে শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে রাতের অন্ধকারে একদল ডাকাত মানিকোড়ায় দেবীর পুজো দিতে আসত। পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে একদল ডাকাত জঙ্গলে ঘেরা মানিকোড়ায় দেবীর পুজো দিতে আসত। এই দেবী জাগ্রত বলে দাবি স্থানীয়দের৷
আসন্ন কালীপুজো উপলক্ষে কলকাতা পুলিশের সমন্বয় সভা
সূর্য ওঠার আগেই পুজো দিয়ে আবার নিজেদের ডেরায় ফিরে যেত ডাকাতরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজো উদ্যোক্তাদের পরিবর্তন ঘটেছে। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় এক জমিদার জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত পুজোর বেদি খুঁজে পান। এরপর থেকে বংশপরম্পরায় জমিদারদের উদ্যোগে এই পুজো হয়ে আসছে। আগে পাঁঠা বলির সময় শেকল দিয়ে বাঁধা থাকত দেবীমূর্তি। তবে এখন আর শেকল বাঁধা হয় না। তবে দেবীর চক্ষুদানের সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মন্দিরের সদর দরজা।
কথিত রয়েছে, চক্ষুদানের সময় নাকি দেবীমূর্তি দুলতে থাকে। তাই আগে শেকল দিয়ে বাঁধা হতো প্রতিমা। এখন আর সেই নিয়ম নেই। এখন শুধু কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ভক্তদের কাছে জাগ্রত মালদহের হবিবপুর ব্লকের মানিকোড়া ডাকাত কালী। পুজোকে ঘিরে সাতদিন ব্যাপী চলে মেলা, গানের আসর।
মালদহের হবিবপুরের মানিকোড়া গ্রামের এই কালি পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানান গল্প। সেখানে গেলেই স্থানীয়দের মুখে শোনা যায় এই সব গল্প ও পুজোর কাহিনী। ডাকাত দলের হাত ধরেই এই পুজোর সূচনা। অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমানে বাংলাদেশ) রুকনপুর থেকে এসে ঘন জঙ্গলে ডাকাতেরা পুজো শুরু করেছিলেন এখানে। কালী পুজোর রাতে ঘন জঙ্গলে মশাল জ্বালিয়ে পুজো করত রাতভোর, তারপর প্রতিমা বিসর্জন করে চলে যেত ডাকাত দল।
ডাকাতেরা পুজো বন্ধ করলে স্থানীয় জমিদার সেই কালী পুজো করে আসছেন দীর্ঘদিন। তারপর স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাঁধে পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন জমিদার। বর্তমানে মানিকোড়া গ্রামের বাসিন্দারা মিলিত হয়ে এই কালী পুজো করেন। একসময়ের ডাকাত কালী এখন সার্বজনীন কালী পূজা হিসাবেই পরিচিত।
কথিত আছে, একবার মায়ের মন্দিরের পাশ দিয়ে এক শাঁখারি শাঁখা বিক্রি করতে যাচ্ছিল। সেই সময় এক অল্প বয়সী যুবতী তার কাছ থেকে শাঁখা নিয়ে হাতে পড়ে। তখন শাঁখারি তার কাছ থেকে শাঁখার দাম চায়। উত্তরে যুবতী বলে তার বাবা দাম মিটিয়ে দেবে।কিন্তু কোথায় তার বাবা? এদিক ওদিক মুখ ঘোরাতেই দেখে সেই যুবতী নেই। ঠিক সেই সময় উল্টো দিক থেকে মন্দিরের সেবায়েত (কালি বাবা নামে পরিচিত) আসছিলেন। তখন শাঁকাড়ি তাকে বলে যে তার মেয়ে শাঁখা পরেছে তার দাম দিতে। শুনে সেবায়েত অবাক হয়ে বলে যে তার কোনও মেয়ে নেই। তাই শাঁখা পড়ার প্রশ্নই উঠেনা। তখন সেবায়েতের দৃষ্টি যায় মন্দিরের পাশে পুকুরের দিকে, দেখেন জল থেকে দুটি হাত উঠে আছে। সেই দুই হাতে শাঁখাড়ির পড়ানো শাঁখা দেখা যাচ্ছে। সেবায়েতের বুঝতে দেরি হয়না যে স্বয়ং দেবী মা কালীই সেই শাঁখা পড়েছেন।
মানিকোড়া ডাকাত কালী ভক্তদের কাছে খুবই জাগ্রত। প্রতিবছর এই কালীপুজোয় তিন থেকে চার হাজার ছাগ বলি হয়ে থাকে। একসময় এখানে মহিষ বলি হত তবে বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র মালদহ জেলা নয় বর্তমানে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে থেকে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে এই কালীপুজোয়।
বর্তমানে কালীপুজোকে ঘিরে এক বিশাল মেলার আয়োজন করে থাকেন গ্রামের বাসিন্দারা। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এই কালীপুজো ও মেলা দেখতে আসেন। সাত দিন ব্যাপি চলে কালীপুজোর মেলা ও গানের আসর। জাগ্রত এই মায়ের পুজো শুধুমাত্র কালি পুজোয় নয় সারা বছর মঙ্গল ও শনিবার হয়ে থাকে।ভ ক্তদেরও ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।
ডাকাতদের হাত ধরে পূজোর সূচনা। তবে ঠিক কত প্রাচীন এই কালীপুজো তা জানা নেই স্থানীয়দের। শুধুমাত্র লোকমুখেই প্রচলিত রয়েছে ডাকাতদের হাত ধরেই শুরু পুজো। সেই পুজো জমিদার বাড়ির হাত ঘুরে বর্তমানে সার্বজনীন। ইভিএম নিউজ