ব্যুরো নিউজ, ১১ ডিসেম্বর: রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে স্বস্তিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে লোকক্ষয়ে বাড়ছে সমস্যা। গত ১ বছর আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২ দেশের অসংখ্য মানুষ। একসময় রাশিয়া ইউক্রেনে শুরু করেছিল কার্পেট বোম্বিং আর তাতেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় পূর্বতন সোভিয়েত যুক্ত রাষ্ট্রের শস্য ভাণ্ডার ইউক্রেন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিমান হানা শুরু করে রাশিয়া। শুধু যে এই প্রথম যুদ্ধ হচ্ছে তা নয়। ২০১৪ সালে এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার রুশ হানায় ১০ হাজারেরও বেশি ইউক্রেনবাসীর মৃত্যু হয়। তবে এই সংখ্যা নেহাতই আনুমানিক। যেভাবে বোমারুবিমানের হানায়, কামানের গোলায় এবং রকেট ও মিশায়িল হানায় ইউক্রেনে সাধারণ মানুষের বাসভূমি গুড়িয়ে গেছে তাতে বহু দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে হাওয়ায় তার হিসাব রাখেনি কেউ। রুশ হানায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের হাসপাতাল থেকে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নির্বিচারে গোলার মুখে পড়ে হাজারে হাজারে শিশু, নারীরা প্রাণ হারিয়েছে। পাল্টা মার খেয়েছে রাশিয়াও। ইউক্রেনের গেরিলা আক্রমণে বহু রুশ ট্যাঙ্ক, কামান, সাঁজোয়া গাড়ি এবং বোমারুবিমান খোয়াতে হয়েছিল রাশিয়াকে। কিন্তু এই যুদ্ধের কারণ কি ছিল? রাশিয়ার চেয়েও কম ক্ষমতাশালী ইউক্রেন যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয়েছিল কেন?
কাশ্মীর প্রসঙ্গে টুইট | কী বললেন প্রধানমন্ত্রী?
১৯৯৪ সালে রাশিয়া এবং ইউক্রেন নিজেদের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগ না করার চুক্তিতে সাক্ষর করে। উদ্যেশ্য ছিল, দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বন্ধ করা। হাঙ্গেরি রাজধানী বুদাপেস্টে এক বৈঠকে মিলিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন , রাশিয়া ও ইউক্রেন। রাশিয়া ১৯৯৯ সালে ইউরোপের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন মত নিজের নরাপত্তা বেষ্টনী পরিবর্তনেরও নিশ্চয়তা পায়। একইসঙ্গে ব্রিটেন মার্কিন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে। সে সময় ২০০২ সালে ন্যাটো অর্থাৎ উত্তর অ্যাটলান্টিক ট্রিকি অর্গানাইজেশন এর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক নিয়ে জল ঘোলা শুরু হয় রাশিয়ার। অর্থাৎ ন্যাটো ভুক্ত দেশ গুলির সঙ্গে ইউক্রেন বন্ধুত্ব করুক। ১০০৮ সালে যখন জর্জিয়া এবং ইউক্রেন ন্যাটোটে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে তখনই রুশ রাষ্ট্রপ্রধান ব্লাদিমির পুতিন হুমকি দেয়, রাশিয়া ন্যাটোর সঙ্গে এই যোগ মেনে নেবে না। ফলে ন্যাটো ভুক্ত কয়েকটি দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই রুশ হুমকির মুখে পড়ে ২০০৮ সালে বুখারেস্ট সম্মেলনে ন্যাটো ইউক্রেন এবং জর্জিয়াকে সদস্যপদ দিতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই ন্যাটোর সদস্যপদকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়ে যায়। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সেরগি ল্যাভরভ ঘোষণা করেন, ন্যাটো সদস্য হওয়ার চেষ্টা করলে ওই সব দেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে যে কোনও ব্যবস্থা তারা নেবে। পুতিন জানান, ন্যাটো সদস্যরা কথা দিয়েছে যে পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিকে তারা সদস্য হিদাবে নেবে না। আর তা নিয়েই শুরু হয়ে যায় লড়াই। রুশ প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল ক্রেমলিন থেকে তাঁদের পরামর্শ দাতা সেরগেয়ি গ্ল্যাজিয়েভ ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি অনুসারে ইউক্রেনের স্বাধীনতার গ্যারান্টি তারা আর দেবে না। আরও দু’পা এগিয়ে পাল্টা তৎকালিন ইউরোপের রাষ্ট্র প্রধান ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপিইয়ার ইউনিয়নের সেই চুক্তি বাতিল করে দেয়। তিনি অনেকটাই রুশপন্থী হয়ে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীণ ইউরেশিয়ান উকনমিক ইউনিয়িনের সঙ্গে মাখামাখি শুরু করে। রাশিয়ার এই পাল্টা চাপের কায়দাকে বলা হত ইউরোমেডান। এরপর থেকেই ইউক্রেনে রুশপন্থিদের বিরুদ্ধে শুরু হয়ে যায় লড়াই।
এরই সূত্রে রাশিয়ান সেনা কোনও প্ররোচনা ছারাই ইউক্রেনের মধ্যে সেনা মতায়েন শুরু করে। এমনকি ক্রিমিয়াটেও পৌঁছয় রুশ সেনা। ক্রিমিয়ার পার্লামেন্টের কাজ কর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের এপ্রিলে শুরু হয় ডনবাসের যুদ্ধ। বিশেষত ইউক্রেনের সরকারী অফিস গুলির দখল নেয় ইউক্রেনের বিচ্ছিনতাবাদীরা। তাদের পেছন থেকে সাহায্য করে রাশিয়া। ইউক্রেনকে ২ অংশে ভাগ করে নাম দেওয়া হয়, নাম দেওয়া হয় ডোনেস্ক পিপলস রিপাবলিক ও রুথান্স পিপলস রিপাবলিক। ইউক্রেনের এই দুই রিপাবলিক নেশনের মধ্যে ঢুকে পরে রুশ সেনা। ২০১৪ সালে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ না করার চুক্তি হয়েছিল তা বারবার অমান্য করা হয়। এর জন্য মূলত দায়ী ছিল রাশিয়াই। রাশিয়া, ইউক্রেনেরমধ্যে তাদের রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তি প্রয়োগ শুরু করে। পুতিন একটি ঐতিহাসিক ব্যখ্যা দিয়ে বলে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের জনগণ একই। তাদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। রাশিয়ার বলশেভিকরাই ইউক্রেনের প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন।
শেষপর্যন্ত ২০২২ সালে রাশিয়া তার শক্তি প্রদর্শন করতে কিছুটা দুর্বল ইউক্রেনকে আক্রমণ করে বসে। বিস্ময়করভাবে সে সময় কোনও সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি রাষ্ট্রসঙ্ঘ বা বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলি। রুশ রাষ্ট্র প্রধান জেলেনস্কি বীণা যুদ্ধে মেদিনী ছাড়েননি। তাদের সেনার পাল্টা প্রহারে রুশ সেনার প্রাণ হানীর সঙ্গে ধ্বংস হয় রুশ অস্ত্র। যুদ্ধের প্রায় শেষ দিকে মার্কিন রাষ্ট্র প্রধান জো বাইডেন শান্তি চুক্তির কথা বলেন। উত্তরে জেলনস্কি জানিয়ে দেন, পুতিনকে বিশ্বাস করা যায় না। কারণ বারেবারে শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করেছে পুতিন। তাই আপাতত কিছুটা যুদ্ধ বিরতী হলেও শ্মশানের শান্তি কতটা থাকবে তা নিয়ে সংশয় গোটা বিশ্বে। ইভিএম নিউজ