ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৩ মার্চঃ ধরুন আপনি রয়েছেন সুদুর দিল্লি, মুম্বই বা আরো দূরে যেমন- লন্ডন কিংবা নিউইয়র্কে । আর আপনার ভালবাসার মানুষটি, নেহাতই গোবেচারা এক ভেতো বাঙালি, তা তিনি পুরুষই হোন বা মহিলা, বসে রয়েছেন কলকাতায়।সামাজিক মাধ্যমে আপনারা বসেছেন মুখোমুখি, চলছে নিতান্ত নিভৃত আলাপচারিতা। এবার কল্পনা করুন, হঠাৎ আপনার ইচ্ছে হলো আপনার মনের মানুষটির ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে। মানে গোদা বাংলায় যাকে বলে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।এমন পরিস্থিতি নিশ্চয়ই অতীতে তৈরি হয়েছে কিংবা ভবিষ্যতেও হতে পারে।কিন্তু দু’জনের দূরত্ব যে হাজার হাজার মাইল।তবে?
চিন্তা করবেন না। বিজ্ঞান বলে একটা বস্তু আছে তো! আর বিজ্ঞানী বলে কিছু উদ্ভট মানুষ আছেন যারা অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলেন। সেই রকম কাজই করে ফেলেছেন চীনের এক বিজ্ঞানী। তিনি এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। যার মাধ্যমে বহু দূরে থাকলেও প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ানোর স্বাদ পেতে পারেন।
কি বলবেন একে? দূর-চুম্বন যন্ত্র? বলাই যায়। আবিষ্কারক বিজ্ঞানীর নাম জিয়াং ঝং লি। কি ভাবছেন? এমন আবার হয় নাকি?
হ্যাঁ, এমনই তো হয়েছে। চীনে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এই দূর-চুম্বন যন্ত্র। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে যারা কর্মসূত্রে দিনের পর দিন একসঙ্গে থাকতে পারেন না, তারাও কিনছেন এই যন্ত্রটি। ইতিমধ্যেই সেটি বিকতে শুরু করছে বাজারে।
আসলে এই যন্ত্রটি হল কৃত্রিম ঠোঁট। সিলিকন দিয়ে তৈরি। দেখতে হুবহু মানুষের ঠোঁটের মতই। এই ঠোঁটে রয়েছে একাধিক উন্নতমানের সেন্সর এবং অ্যাকচুয়েটর, যা আপনাকে দিতে পারে মানুষের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ানোর একই অনুভূতি। চাপ, তাপমাত্রা, নড়াচড়া অর্থাৎ চুমুর সঙ্গে মানুষের ঠোঁটের পেশী যেভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়, সেই একই অনুভূতি দিতে সক্ষম এই চীনা ঠোঁট। এমনকি তৈরি করতে পারে চুমু খাওয়ার শব্দও। একেবারে রক্তমাংসে গড়া ঠোঁটের মতই তার কাজ-কারবার।
চীনের ঝিয়াতসু প্রদেশের চ্যাংঝৌ ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেকাট্রনিক টেকনোলজি-র গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে এই ঠোঁট। ডিভাইসটির দামও সাধ্যের মধ্যেই রাখাবার চেষ্টা করেছে তাঁরা। চীনা মুদ্রায় যার দাম ২৮৮ ইউয়ান অর্থাৎ মাত্র ৪১ মার্কিন ডলার অথবা ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকার সামান্য কিছু বেশি। আবিষ্কারক জিয়াং ঝং লি এই কৃত্রিম ঠোঁটের পেটেন্টও পেয়ে গিয়েছেন। যদিও এই যন্ত্র তিনি আবিষ্কার করেছিলেন অনেক আগেই।
২০১৯ সালেই এই ঠোঁটের খবর ভাইরাল হয়েছিল, কিন্তু সে সময়ে পেটেন্টের আবেদন করলেও কোন অজ্ঞাত কারণে পেটেন্ট মিললো এই ২০২৩ সালে এসে। যদিও এই চিনা ঠোঁটই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার একটি সংস্থা ‘টাচ সেনসিটিভ সিলিকন প্যাড’ তৈরি করেছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল কিসিং গার্ড। তবে সেই যন্ত্র না কি এতটা অনুভূতি প্রবণ ছিল না। তাই সেভাবে বাজারও ধরতে পারেনি।
প্রস্তুতকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এর মধ্যেই প্রায় আড়াই হাজার যন্ত্র তৈরি করেছেন তারা এবং মাত্র কুড়ি দিনের মধ্যেই তার সবকটিই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তাঁদের আশা, এই আবিষ্কার গোটা বিশ্বের তরুণ তরুণীদের থুড়ি প্রেমিক-প্রেমিকাদের দারুণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
এই যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে মোবাইল ফোনে একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে হবে এবং তারপর যন্ত্রটিকে মোবাইলের চার্জ দেওয়ার পয়েন্টে প্লাগ-ইন করতে হবে। এরপর শুধুই একটা ভিডিও কল।তারপরই কেল্লা ফতে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের শিষ্য-শিষ্যাদের কাছে দারুন খুশির খবর অবশ্যই। তবে ভারতীয়রা হয়তো একটু দ্বিধায় থাকবেন। কারণ চিনা পণ্যের অভিজ্ঞতাটা তো আমাদের কাছে খুব একটা সুখকর নয়, তাই একটু রয়ে সয়েই চলো বাপু।