মধ্যযুগীয় বর্বরতা। গ্রাম কমিটির মাতব্বরদের ফতোয়া, দিতে হবে কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা। সঙ্গে ছাড়তে হবে গ্রামও। সালিশি সভার নামে জোটে মারধর, রাতের অন্ধকারে বেআইনিভাবে বিবাহবিচ্ছেদে বাধ্য করা হয়! ন্যায় এর আশায় পুলিশের দ্বারস্থ নন্দকুমারের শ্যামলী শাসমল। মাতব্বরদের নিদানে অভিযুক্ত ফের বিয়ে করে।
রাতের অন্ধকারে আদালতের বাইরে, দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারের মীমাংসা পত্রে গ্রাম কমিটির মাতব্বরদের ফতোয়ায় বিবাহবিচ্ছেদ করানো হয় বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ভুক্তভুগী শ্যামলী শাসমলের।১০ বছর আগে নন্দকুমারের চুনাখালি গ্রামের ক্ষুদিরাম শাসমলের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্যামলী শাসমলের।তিনটি মেয়ে আছে তাঁদের।বিয়ের পরই ক্ষুদিরাম তার স্ত্রীকে কাজের জন্য ওড়িশায় পাঠায়।এরপরেই বিস্ফোরক অভিযোগ ক্ষুদিরামের, শ্যামলীর অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগে ক্ষুদিরাম তাকে ব্যাপক মারধর করে। তারপরেই শ্যামলী ফিরে যান তাঁর বাপের বাড়িতে। স্বামীর ভয়ে লুকিয়ে ছিলেন বেশ কিছুদিন।গ্রামে ফিরলে গ্রাম মাতব্বরদের ফতোয়া জারি হয় শ্যামলীর উপর। এই সঙ্গে যে জায়গায় শ্যামলীর নামে জমি রয়েছে তা তার স্বামীর নামে করে দিতে হবে বলে বল প্রয়োগ করে ক্ষুদিরাম ।এইখানেই শেষ নয় ৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে সঙ্গে ডিভোর্স। এর মধ্যে গ্রাম কমিটিকে দিতে হবে এক লক্ষ টাকা।
পরে সালিশি সভায় ডেকে ব্যাপক মারধর করা হয় শ্যামলীরকে। গ্রাম কমিটির সদস্য এবং শ্যামলীর স্বামী কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছে বিষয়টি। ক্ষুদিরাম-এর দাবি তার স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। যে কারণে গ্রামের সালিশি সভায় সে বিচার চায় ।সালিশি সভায় তাকে নতুনভাবে সংসার করতেও নিদান দেওয়া হয় ।জোর করে জায়গা জমির রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়া হয়। এরপরেই ক্ষুদিরাম ফের বিয়ে করে। অসহায় শ্যামলী সংবাদ মাধ্যম এর দ্বারস্থ। প্রশ্ন উঠেছে যেখানে নন্দকুমার থানা এলাকায় কোন আদালত নেই, সেখানে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে ডিভোর্স সম্পন্ন হলো কিভাবে? এদিকে গ্রাম কমিটির সভাপতি প্রজাপতি বর্মন টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। যেখানে বিচারব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে একবিংশ শতাব্দীতে গ্রামের মোড়লদের মাতব্বরি এখনো বিদ্যমান তা নন্দকুমারের ঘটনায় স্পষ্ট। ন্যায় বিচারের আশায় শ্যামলী বর্মন অভিযোগ করেছেন নন্দকুমার থানায়। ৪৯৭, ৪৯৮ এ, ৪৯৪/৩৮৪, ৪৪ আইপিসি এই ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ১০ জনের নামে। শ্যামলী ন্যায়বিচার পাবেন কিনা, সেটাই দেখার।