ব্যুরো নিউজ, ৩০ অক্টোবর: ভারতে আরও বাড়ল খাদ্যাভাবগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা
Global Hunger Index শিরোনামে Concern Worldwide ও Welt Hunger Hilfe নামের দুটি বেসরকারি সংস্থা যৌথভাবে প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। Concern Worldwide সংস্থাটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৬৮ সালে আয়ারল্যান্ডে। আর Welt Hunger Hilfe নামক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে পশ্চিম জার্মানিতে। এই বছর Global Hunger Index এ ১২৫ টি দেশের মধ্যে আমাদের দেশের অবস্থান ১১১তম। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে চিনের অবস্থান শীর্ষে। ২০টি দেশের মধ্যে, শ্রীলঙ্কা তালিকায় ৬০ তম স্থানে, নেপাল রয়েছে ৬৯ তম স্থানে। আর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান রয়েছে যথাক্রমে ৮১ ও ১০২তম স্থানে। ভারতের পিছনে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, হাইতি, সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদানের মতো ১২টি আফ্রিকান দেশ।
এই ক্ষুধা সূচক প্রস্তুতির জন্য মূলত ৪ টি উপাদানের ওপর নজর দেওয়া হয়। সেই উপাদানগুলি হোল অপুষ্টি, শিশুদের অপর্যাপ্ত দৈহিক বিকাশ, শিশুদের উচ্চতার অনুপাতে কম ওজন ও শিশুমৃত্যু। এখানে শিশু বলতে ৫ বছরের কমবয়সিদের কথা বলা হয়েছে। এই ৪ টি উপাদানের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অপুষ্টি ও শিশুমৃত্যুর ওপর। ক্ষুধা সূচক প্রস্তুতির জন্য প্রথমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্পন্ন সংস্থাগুলির থেকে প্রতিটি দেশের উপরে উল্লিখিত এই ৪ টি উপাদান বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
কালীপুজোয় কদর কমেছে মাটির প্রদীপের, তবুও আশায় মৃৎশিল্পীরা
তারপর পরিসংখ্যানবিদ্যার সাহায্য নিয়ে ০ থেকে ১০০ এর পাল্লার মধ্যে গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্স স্কোর (GHI Score) তৈরি হয়। এই পাল্লাকে আবার ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ১০-এর নিচে স্কোর মানে ‘ভাল’, ১০ থেকে ২০-র মধ্যে স্কোর ‘মোটামুটি’, ২০ থেকে ৩৫ স্কোর হলে ‘গুরুতর’, ৩৫ থেকে ৫০ স্কোরের অর্থ ‘উদ্বেগজনক’ ও ৫০-এর ওপরে স্কোরের অর্থ ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’।
সরকার থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে এই সূচক ভুল। সূচক প্রস্তুতির পদ্ধতি ভুল। সূচক প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত চারটি উপাদানের মধ্যে তিনটি শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কীয়, কোনওভাবেই দেশের ক্ষুধার প্রকৃত চিত্র নয়। অপুষ্টির তথ্য সংগ্রহের জন্য মাত্র তিন হাজার জন মানুষের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই সমীক্ষা দিয়ে দেশের সার্বিক অপুষ্টির চিত্র কোনওভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়। এই সব বিষয়ে প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়েছে, প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তথ্যভাণ্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেই এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়, তাই এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। শিশুদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দিয়ে প্রস্তুত রিপোর্টের নাম “ক্ষুধা সূচক” হওয়া অনুচিত। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের জবাব, শিশুদের বেহাল স্বাস্থ্য ইঙ্গিত করে অপ্রতুল খাদ্যনিরাপত্তা, গর্ভবতী মায়েদের অপুষ্টি, দেশের দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পানীয় জল ও পরিচ্ছন্ন আবাসের সুবিধা না-থাকা। আর এই সবকিছুই একটি দেশের খাদ্যসঙ্কটকে চিহ্নিত করে।
দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম সযত্নে এড়িয়ে গেছে এই রিপোর্ট সংক্রান্ত সব খবর। অনিচ্ছাসত্ত্বেও অবশিষ্ট ছিটেফোঁটা সাংবাদিক সত্তার দায়ে খবরকাগজের কোনও এক কোণে বা দিনের কোনও অলস সময়ে কিছু সময়ের জন্য টিভিপর্দায় স্থান পেয়েছে দেশের ক্ষুধার চিত্র। এই খবর প্রকাশে যা নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়েছে তার চেয়ে বেশি নিউজপ্রিন্ট খরচ করা হয়েছে এই রিপোর্টকে অভিসন্ধিমূলক, মিথ্যা, বিদেশি চক্রান্ত প্রমাণে। অবশ্য প্রেস ফ্রিডম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১তম স্থানে থাকা দেশে সেটাই স্বাভাবিক। তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো কিছুতেই দেশের বে-আব্রু দশাকে আড়াল করতে পারছে না সরকার, সরকারি দল ও তাঁদের সংবাদমাধ্যম। ইভিএম নিউজ