জাহাঙ্গির বাদশা, পূর্ব মেদিনীপুরঃ দলের প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েতের প্রধান হলেও, গোপনে জেলার বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার অভিযোগ উঠেছিল অনেকদিন আগেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল প্রধানের পদের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি প্রকল্পে স্বজনপোষণ আর ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ। একের পর এক সেই অভিযোগ পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতায় দলের সদর দফতরেও। শেষপর্যন্ত শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশের পদত্যাগ করতে বাধ্য হন পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদা ব্লকের শান্তিপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সেখ সেলিম আলি। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। পর তিনি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দায়ের করা কালোপাথর চুরির মামলায়, সেলিম এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শান্তিপুরের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি দিবাকর জানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেলিম আর দিবাকরের গ্রেফতারি পর থেকেই, কার্যতো এলাকাছাড়া হয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন, শান্তিপুর ১ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের কৃষ্ণা সামন্ত রায়। কিন্তু শনিবার সকাল থেকেই, ওই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি সম্পর্কে একটি পোস্টার মেচেদা শহর আর শান্তিপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেই কার্যত গোটা পূর্ব মেদিনীপুর শহরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ডামাডোল।
শনিবার সকালে ছড়িয়ে পড়া ওই লিফলেট দেখা যায় ১০০ দিনের কাজ থেকে আবাসযোজনা, শৌচাগার নির্মাণ আর চাকরি দেওয়ার নাম করে, কয়েককোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন উপপ্রধান কৃষ্ণা সামন্ত রায়। পোস্টারটিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে জনগণের টাকা লুঠ করে বাড়িগাড়ি সম্পত্তি কিনেছেন ওই তৃণমূলনেত্রী। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রচুর বেআইনি টাকা আর সোনার গয়না রয়েছে কৃষ্ণ সামন্ত রায়ের। আর এই যাবতীয় বেনিয়মের তদন্তের দাবি করা হয়েছে ওই পোস্টারে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এই যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, শান্তিপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই তৃণমূল উপপ্রধান।
অন্যদিকে, ঘটনাটি সম্পর্কে শান্তিপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান সুজয় মাইতির সংক্ষিপ্ত মন্তব্য প্রসাশন এসব তদন্ত করে দেখুক। পাশাপাশি, তৃণমূলের শান্তিপুর ১ নম্বরের অঞ্চল সভাপতি পঞ্চানন দাস জানিয়েছেন, উপপ্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ তিনি দলের উচ্চতর নেতৃত্বকে জানাবেন।
তবে এইসব রাজনৈতিক তরজার মধ্যে না গিয়ে সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত নিতান্ত সাধারণ গ্রামবাসীদের এখন একটাই দাবি। তৃণমূল পরিচালিত শান্তিপুর ১ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের অভিযুক্ত প্রাক্তন আর বর্তমান পদাধিকারীদের দুর্নীতির উপযুক্ত আর নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক।