ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১২ এপ্রিলঃ (Latest News) দুর্নীতিতে জেরবার দলকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে চাঙ্গা করতে ঘোড়ার আড়াই চালের পরিবর্তে তিন চাল মমতার। শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। নেই গুড়-বাতাসা কিংবা নকুলদানা বিলি। শোনা যাচ্ছেনা চড়াম চড়াম ঢাকের আওয়াজও। অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে আবাস যোজনায় দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, পানীয় জলের অভাব , ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি, গরু পাচার, কয়লা পাচার সহ একাধিক ইস্যুতে কোণঠাসা হওয়া তৃণমূল দলে তৈরি হয়েছে গভীর ক্ষত। ‘দিদির দূত’ কর্মসূচীতে গিয়েও গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে একাধিক সাংসদ, বিধায়ক এমনকি দলের তারকা নেতা-নেত্রীদের। প্রায় গোটা শিক্ষা দফতরটাই এই মুহূর্তে জেল বন্দী। যোগ্য-মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের স্থান হয়েছে রাস্তার ফুটপাথে। শুধু স্কুল শিক্ষক পদেই নয়, দুর্নীতি হয়েছে পৌরসভা থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দফতরেও। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই দাবী করেছেন দেশের সর্বোচ্চ দুই তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটাই চলে গিয়েছে দুর্নীতিবাজদের হাতের মুঠোয়। মহার্ঘ্য ভাতার ইস্যুতে সরকারী কর্মচারীদের সঙ্গে সম্পর্কও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু এসবের থেকেও মমতার সবথেকে বড় মাথা ব্যথার কারণ সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলাফল। এখানে তো আবার মুসলিম ভোট হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থায় দলকে চাঙ্গা করতে ঘোড়ার আড়াই চাল থুড়ি তিন চালের অস্ত্রে শান দিতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বিষয়ে সকলেই আমরা কম-বেশী অবগত যে ভোটের আগে চমক দেওয়ার ক্ষেত্রে মমতার জুড়ি মেলা ভার। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না করেও ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনার ঘটনা কারোরই হয়তো অজানা নয়। ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের সাহায্য নিয়ে, ভাঙা পা নিয়ে সেবার বিধানসভায় ব্যাপক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছিল তৃণমূল। সেবার এনআরসির (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) জুজু দেখিয়ে সংখ্যালঘুদের ভোট টানতে সফল হয়েছিলেন মমতা। সংখ্যালঘুদের মমতা বুঝিয়ে ছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে আজান বন্ধ হবে। ঈদ, কুরবানি সব বন্ধ হবে। পাশাপাশি ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের স্লোগান ছিল, ‘যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিন কিন্তু বিজেপিকে একটি ভোটও নয়’। যা নিজের ঘর শূন্য করেও পরোক্ষ ভাবে তৃণমূলকেই সাহায্য করেছিল। এছাড়াও ‘দুয়ারে সরকার’ ,’লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো প্রকল্প রাজ্যবাসির, বিশেষ করে বাংলার মা-বোনদের মন জয় করেছিল। এই সমস্ত হাতিয়ারকে একত্রিত করেই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করেছিলেন মমতা। যদিও কুল বাঁচাতে পারলেও মান বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মমতা। অর্থাৎ মোট ৪৭.৯৪% ভোট পেয়ে (২৭% সংখ্যালঘু ভোট) সরকার গঠন করে কুল বাঁচালেও নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে হার মমতার মান বাঁচাতে পারেনি।
এবার অবশ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের লড়ার কৌশলটা একটু আলাদা। মমতারই ঘনিষ্ঠ সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, রণং দেহি নয় বরং সমঝোতার রাস্তা বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কি কি রাজনৈতিক প্যাঁচ ঘুরপাক খাচ্ছে মমতার মাথায়?
১) বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফের কাছে চলে যাওয়া সংখ্যালঘু ভোট আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে। আর তাই রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যতা তৈরির পাশাপাশি ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে আইএসএফকে তৃণমূল বিরোধী আন্দোলন থেকে হটিয়ে দেওয়া। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তার দিল্লি সফরে গিয়ে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে সেই সমঝোতার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
২) ডি এ আন্দোলনের মাঝেই বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে দিয়ে যেন তেন প্রকারেণ সরকারী কর্মচারীদের ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং তারপর ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ ভোটটা করাতে হবে এই সরকারী কর্মচারীদের দিয়েই।
৩) পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ মমতা নিজের হাতে নিয়েছেন। কারণ কি? কারণ হল মমতা ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯০ % নতুন মুখকে প্রার্থী করতে চলেছেন। ‘দিদির দূত’ কর্মসূচীর মাধ্যমে তিনি বুঝতে পেরেছেন, নতুন মুখ সামনে না আনলে আসন্ন পঞ্চায়েতে ভরাডুবি নিশ্চিত।(EVM News)