ইভিএম নিউজ ব্যুরোঃ ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মঙ্গলবার আগরতলায় নির্বাচনী প্রচারের রোড শো করতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ত্রিপুরাকে ‘উদ্ধার’ করার দায়িত্ব তিনি তাঁর ভাইপো অভিষেকের হাতেই সমর্পণ করেছেন। এদিন ভাইপো অভিষেককে সঙ্গে আগরতলার সাড়ে পাঁচ কিমি রাস্তা হেঁটে জনসভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘আমি অভিষেককে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। নবীন প্রজন্ম এগিয়ে আসুক। ত্রিপুরাবাসীকে উদ্ধার করুক। আমি প্রত্যেকটা ঘটনার উপর নজর রাখতাম।’’

মমতার এহেন বক্তব্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় তাঁর নিজের এলাকাতেই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন বলে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাঁকে ত্রিপুরার ‘ডামি’ নেতা বানিয়েছে তৃণমূল? উঠছে আরো এক প্রশ্ন, কোনো রাজ্যে রাজনৈতিক লড়াই বা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে শুরু করে সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে কি সেই রাজ্যকে ‘উদ্ধার’ করা বলা যেতে পারে? এতে করে ওই রাজ্যের ভোটারদের ‘অপমান’ করা হচ্ছে না? এইসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ত্রিপুরবঙ্গের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে।

অন্যদিকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘পরিযায়ী’ ও ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করলেও এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন বাংলা আর ত্রিপুরা ভাই-বোন। উভয় রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে অভিন্নতাই বেশি। তিনি এদিন বলেন, “বাংলার সংস্কৃতি, ত্রিপুরার সংস্কৃতি একেবারে এক। পার্থক্য নেই। আপনার কথাও এক, আমার কথাও এক। আপনার ভাষাও এক। আমার ভাষাও এক। আপনার রান্নাও এক, আমার রান্নাও এক। আপনাদের শঙ্খধ্বনি এক, আমাদের শঙ্খধ্বনিও এক। আপনাদের উলুধ্বনিও এক। আমাদের উলুধ্বনি এক। আপনার ধর্ম সর্বধর্মসমন্বয়, আমাদের ধর্মও এক।’’ তিনি এদিন দাবি করেন, “বাংলা থেকে ত্রিপুরার দূরত্ব মাত্র আধঘন্টা।” এই ব্যাপারেও যথারীতি প্রশ্ন উঠেছে। বৃহৎ বঙ্গের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ যে ত্রিপুরা এ কথায় কোনো ভুল না থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরার দূরত্ব প্রায় ১৫৩২ কিমি, সড়ক পথে পশ্চিম বাংলা থেকে ত্রিপুরায় যেতেও সময় লাগে প্রায় ৩৭ ঘন্টা, এ ক্ষেত্রে বিমানে কলকাতা থেকে আগরতলা যাওয়ার জন্য ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের সময়টাকে যেভাবে তৃণমূল নেত্রী বাংলা ও ত্রিপুরার মধ্যে নৈকট্য বোঝাতে উল্লেখ করেছেন, তা যে ভিত্তিহীন, সে কথার চর্চা চলছে ত্রিপুরার বিভিন্ন মহলে। পাশাপাশি ত্রিপুরায় যে বাঙালির সংস্কৃতিই এক ও একমাত্র সাংস্কৃতিক পরিচয় তা নয়, বরং নানা আদিবাসী ও উপজাতিদের সংস্কৃতি ত্রিপুরার সমাজ জীবনের কেন্দ্রভাগেই রয়েছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মধ্যে বেশ কিছুটা ফারাক রয়েছে। এই ফারাকটাকে তৃণমূল তাদের রাজনৈতিক বোঝাপড়ার মধ্যে আনতে নারাজ। এমনটাই ব্যাখ্যা ত্রিপুরার সমাজতাত্ত্বিক মহলের।

ত্রিপুরার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে বহু পুরোনো, এ কথাও এদিন স্মরণ করানোর চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরার প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে আমি আর সন্তোষ’দা যাইনি। গিয়েছিলাম একটা জায়গায়— রতনপুর। সেখানে ছ’জনের দেহ মিলেছিল। উদয়পুর থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেছি। ত্রিপুরা আমার কাছে নতুন নয়।’’ উল্লেখ্য, সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা দেব এখন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। বিজেপির পাশাপাশি বাম ও কংগ্রেসেরও সমালোচনা চালান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অভিষেকের পাশাপাশি তিনিও দাবি করেন, বিজেপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি তৃণমূল।

এদিন মমতার ভাষণে ছিল স্বাস্থ্যসাথী থেকে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের কথা। ত্রিপুরায় তৃণমূল ক্ষমতায় এলে সে রাজ্যের মানুষ এইসব পরিষেবা পাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এদিন ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে রোড শো শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাঁদের মন জয়ের চেষ্টা চালান। একটি দোকানেও ঢুকে পড়ে সিঙ্গারা বানানোর কাজে সহযোগিতা করতে দেখা যায় তাঁকে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর